শুটিং স্পট থেকে

‘ষণ্ডা-পাণ্ডা’র ভয়ে চঞ্চল চৌধুরী

ধারাবাহিক নাটক ‘ষণ্ডা পাণ্ডা’র শুটিং। ছবি: স্টার

দ্রুত হেঁটে আসছেন চঞ্চল চৌধুরী। হঠাৎই তার সামনে এসে দাঁড়ান মাসুম বাশার। শুরু হয়ে যায় তুমুল ঝগড়া।

সত্যি করে অবশ্য তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি। গাজীপুরের পূবাইলে চলছে সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত নতুন ধারাবাহিক নাটক 'ষণ্ডা পাণ্ডা'র শুটিং। সেখানেই এই কৃত্রিম ঝগড়ার সূত্রপাত।

নাট্যকার বৃন্দাবন দাশ ১১ বছর পর সালাউদ্দিন লাভলুর জন্য বড় ধারাবাহিক লিখেছেন। দীর্ঘ বিরতি শেষে নাটকটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী।

ধারাবাহিক নাটক ‘ষণ্ডা পাণ্ডা’র শুটিং। ছবি: স্টার

ঝগড়ার দৃশ্যটি ধারণের সময় পেছন থেকে কেউ একজন কথা বলা শুরু করেন। পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলু মনিটরের সামনে থেকে বললেন, 'শটটি আবার নিতে হবে। বাইরে থেকে শব্দ আসছে। কথা বলে কে?'

ইউনিট থেকে একজন বললেন, 'চুপ করেন প্লিজ! শুটিং চলছে।'

আবার শুরু হলো চঞ্চল চৌধুরী ও মাসুম বাশারের সংলাপ। দুজনই বেশ উত্তেজিত। পরিচালক বললেন, 'কাট! মোটরসাইকেলের শব্দ আসছে।' ইউনিটের সদস্যরা পেছনে তাকিয়ে দেখেন মোটরসাইকেল যাচ্ছে। আবার কয়েক মিনিট পর শুরু হলো শুটিং।

সবাই তখন চুপ, পরিচালক বললেন, 'অ্যাকশন!' পুনরায় সংলাপ শুরু চঞ্চল চৌধুরী ও মাসুম বাশারের। দৃশ্য ধারণ শেষে পরিচালক বললেন, 'গুড! চঞ্চল ভালো করেছিস। এখানকার শুটিং শেষ। বাড়িতে চলো সবাই।'

পরিচালক ছাতা মাথায় হাঁটতে লাগলেন, সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী। রাস্তায় পাশ থেকে কয়েকজন নারী তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। একজন বললেন, 'দেখ দেখ চঞ্চল চৌধুরী যাচ্ছে।'

শুনতে পেয়ে হাসলেন চঞ্চল।

এবার শুটিং বাড়ির বারান্দায়। একটি গাছের নিচে ক্যামেরা ও মনিটর সেট করা। ইউনিটের সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নিজ নিজ কাজে। সহকারী পরিচালক বললেন, 'এখনকার দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মিম ও মাহা থাকবেন।'

পরিচালক বললেন, 'একবার রিহার্সাল করে নেওয়া যাক।'

ধারাবাহিক নাটক ‘ষণ্ডা পাণ্ডা’র শুটিং। ছবি: স্টার

১০ মিনিট রিহার্সাল চললো। সংলাপ দিতে গিয়ে কয়েকবার ভুল করেছিলেন মিম ও মাহা। চঞ্চল চৌধুরীরও একবার ভুল হয়েছে। পরিচালক বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে সংলাপ বলতে হবে।

পেয়ারা গাছের নিচে মনিটর রাখা। সেখান থেকে পরিচালক জোরে বললেন, 'চঞ্চল ঘর থেকে বের হয়ে আসবি, বাকি ২ জন বাইরে থেকে ঘরে ঢুকবে। বারান্দায় এসে থামবে সবাই।'

অ্যাকশন বলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চশমা পরে চঞ্চল চৌধুরী প্রচণ্ড ব্যস্ততা নিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেন, তার চোখে মুখে অস্থিরতা। হঠাৎ তার সামনে পড়ল মিম ও মাহা। দুজনই তার ছাত্রী। চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে অন্যদিকে পালাতে চেয়েছিলেন ছাত্রী দুজন। কিন্তু পারলেন না। প্রথম ছাত্রী বলল, 'স্যার আপনাকে নাকি ষণ্ডা-পাণ্ডারা কঞ্চির বাড়ি দিয়েছে? ঘটনা কি সত্য স্যার?'

চঞ্চল চৌধুরী মেজাজ খারাপ করে বললেন, 'কার এতবড় সাহস, আমাকে মারে? তোমরা ভুল শুনেছ। কোথাও মিসটেক হয়েছে। এমন মিসটেক ভুলেও করবে না।' চশমা ঠিক করতে করতে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, 'দেখা যখন হয়েই গেল, ইংরেজি বইটা নিয়ে এসো। আজকের পড়াটা শেষ করে যাই।'

ছাত্রীদের একজন বলল, 'স্যার আমরা আজ পড়ব না।' চঞ্চল ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।

বড় এই দৃশ্যের শুটিং শেষ হলো বেশ সময় নিয়ে। শিল্পীরা পোশাক বদলাতে গেলে সেই ফাঁকে এলো চা।

চা বিরতি শেষে আবারও শুটিং শুরু।

খুব ব্যস্ত হয়ে চঞ্চল চৌধুরী কলেজে যাচ্ছেন। রাস্তায় তার ছাত্রীদের সঙ্গে তার দেখা। এই সময়ের একটি সংলাপ আবার দিতে বললেন পরিচালক। চঞ্চল পুনরায় সংলাপ বললেন। ভুল হলো। তৃতীয়বারে দৃশ্যটি চূড়ান্ত হওয়ার পর পরিচালক বললেন, 'এবার লাঞ্চ ব্রেক।'

দুপুরে হরেক পদের খাবার শেষে খানিকটা বিশ্রাম পাওয়া গেল।

চঞ্চল চৌধুরী নাটকটি নিয়ে বলেন, 'এই নাটকে আমি একজন কলেজ শিক্ষক, টিউশনিও করি। কথায় কথায় ইংরেজি বলি। যে কারো সঙ্গে কথা শুরু হলেই ইংরেজি বলি। খুব মজার একটি চরিত্র।'

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। এবার শুটিং ঘরের ভেতরে। শুটিং শুরু হবে, তখনই বিদ্যুৎ চলে গেল। এক ঘণ্টার পর বিদ্যুৎ এলে আবার শুটিং শুরু হলো।

রাতের দৃশ্য। গ্রামের ষণ্ডা পাণ্ডারা খেপেছেন চঞ্চল চৌধুরীর ওপর। ষণ্ডা পাণ্ডাদের ভয়ে দৌড়ে পালালেন চঞ্চল চৌধুরী।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its national executive committee member Salahuddin Khan, will file the complaint

2h ago