হুমায়ূন আহমেদ আমাকে ‘মতি’ নামে ডাকতেন: ফারুক আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদের 'আজ রবিবার' নাটকটি খুবই দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। এতে অভিনয় করেছিলেন ফারুক আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের মুখোমুখি হয়েছিলেন ফারুক আহমেদ। কথা বলেছেন নানান বিষয়ে।
টিভি নাটক আগের মতো জনপ্রিয় হচ্ছে না কেন?
এরসঙ্গে অনেকগুলো কারণ জড়িত। প্রথমত বাজেটের ঘাটতি। আগে ৩ থেকে ৪ দিনে এক ঘণ্টার নাটকের শুটিং করতাম। আর এখন- ১ থেকে ২ দিনে নাটক শেষ করতে হচ্ছে। তাহলে কাজটিতে যত্নের ছোঁয়া কীভাবে থাকবে? দ্বিতীয়ত, নতুন নাট্যকার সেভাবে আসছেন না। কয়েকজন নাট্যকারই ঘুরেফিরে নাটক লিখছেন। তবে, মেধাবী অভিনেতা এবং পরিচালক আছেন। তৃতীয়ত, ভালো গল্পের সংকট আছে। অভিনয়ের চর্চা বেশি বেশি হলেও ভালো স্ক্রিপ্ট আসছে না। তারপরও ভালো কাজ যে একবারেই হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। তবে, আমি মনে করি প্রধান কারণ বাজেট। নাটকের বাজেট বাড়ানো গেলে সব কাজ সুন্দরভাবে হতো।
আপনি অনেক নাটকে কাজ করেছেন এবং এখনো করছেন, এর পেছনে কারণ কী?
অভিনয় করি মনের তাগিদ থেকে। শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই অভিনয় করি। অভিনয় না করলে অনেক কিছুই করতে পারতাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি। একসময় বড় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি। বিসিএস দিয়েও বড় কিছু হতে পারতাম। কিন্তু, সবকিছু বাদ দিয়ে তাহলে অভিনয় কেন করছি? আসলে ভালোবাসা আছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। মঞ্চে বছরের পর বছর কাজ করেছি, সেখানে কোনো অর্থপ্রাপ্তির বিষয় ছিল না। মনের ভেতরের ক্ষুধা থেকে অভিনয় করছি।
হুমায়ুন আহমেদের পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি নাটকের অভিনেতা আপনি। তাকে নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ…
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে টানা ২০ বছর কাজ করেছি। পরিচালনায় আসার আগেই তার লেখা 'অচিন বৃক্ষ' এবং 'মাটির পিঞ্জিরা'য় অভিনয় করেছিলাম। 'আজ রবিবার' নাটকে মতি চরিত্রটি করার পর তিনি আমাকে মতি নামে ডাকতেন। তিনি গল্প বলতে পারতেন। সবাই গল্প বলতে পারেন না, হুমায়ূন আহমেদ পারতেন। তিনি গল্পের জাদুকর ছিলেন। অভিনয় করিয়ে নিতে পারতেন। অথচ কোনোদিন থিয়েটার না করেও অভিনয়ের মাত্রা-জ্ঞান ছিল অনেক।
কোনো চরিত্রে অভিনয় করার পর সেই চরিত্র কী আপনার ওপর প্রভাব ফেলেছে?
না। অভিনয় করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে। এজন্য প্রভাব পড়ে না। যখন যে চরিত্রটি করি ওই সময়ের জন্য তা আমার ভেতরে ধারণ করি। শুটিং শেষে আর মনে রাখি না। মনে রাখলে নতুন চরিত্রে কাজ করা সম্ভব হতো না।
ঢাকা থিয়েটারে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। সেসব দিনের কথা মনে পড়ে?
খুব মনে পড়ে। খুব মিস করি। ঢাকা থিয়েটার আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সেলিম আল দীন, শিমুল ইউসুফ, আফজাল হোসেন, হুমায়ুন ফরীদি, সুবর্ণা মুস্তাফা, কামাল বায়েজীদসহ আরও অনেকের সঙ্গে কাজের স্মৃতিগুলো কখনোই ভুলতে পারব না। বিশেষ করে আমার অভিনেতা হয়ে ওঠার পেছনে নাসির উদ্দীন ইউসুফের অবদান অনেক। ঢাকা থিয়েটারের 'যৈবতী কন্যার মন' নাটকে এসহাক চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয় ছিল আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। এসহাক চৌধুরী যাত্রাদলের মালিক। যাত্রাশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার চরিত্রের নাম ছিল পরী। ওই নাটকের সংলাপগুলো আজও ভুলিনি। 'কীর্তনখোলা' নাটকের বছির চরিত্রটির কথাও খুব মনে পড়ে।
অভিনয় জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি?
এই মুহূর্তে একটি স্মৃতির কথা মনে পড়ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সর্বপ্রথম মঞ্চায়িত নাটকে আমি অভিনয় করেছিলাম। নাটকের নাম ছিল 'শকুন্তলা'। গ্রিকরা যেমন ভোরবেলায় পাহাড়ের পাদদেশে নাটক করতেন-সেভাবে আমরা মুক্তমঞ্চে রাত ৪টায় প্রথম নাটক করেছিলাম। সেটাই ছিল মঞ্চে প্রথম কাজ আমার।
Comments