বলিউডের জায়গা দখল করছে দক্ষিণের সিনেমা?

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা এখন আর শুধু তাদের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং পুরো ভারতের প্রেক্ষাগৃহে রাজত্ব করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তামিল, তেলেগু, কন্নড় বা মালায়ালাম সিনেমা দারুণভাবে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে সমর্থ হয়েছে। তাই অনেক সিনেমাপ্রেমীর মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি বলিউডের জায়গা দখল করে নিচ্ছে দক্ষিণের সিনেমা?
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা এখন আর শুধু তাদের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং পুরো ভারতের প্রেক্ষাগৃহে রাজত্ব করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তামিল, তেলেগু, কন্নড় বা মালায়ালাম সিনেমা দারুণভাবে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে সমর্থ হয়েছে। তাই অনেক সিনেমাপ্রেমীর মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে কি বলিউডের জায়গা দখল করে নিচ্ছে দক্ষিণের সিনেমা?

আসলে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে, এ ধরণের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভারতের চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা। তাদের পরামর্শ বলিউড নির্মাতাদের আরও সাবধানী হতে হবে, গল্প বাছাইয়ে হতে হবে আরও সতর্ক।

করোনার কারণে ভারতজুড়ে দীর্ঘ লকডাউনের পরে গত বছরের অক্টোবরে পুনরায় প্রেক্ষাগৃহ চালু হয়। এরপর যে কয়টি দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তার বেশিরভাগ সফলভাবে ব্যবসা করেছে। বর্তমানে বিজয়ের বিস্ট এবং যশের কেজিএফ চ্যাপ্টার-২ সেই ধারা ধরে রেখেছে। শুধু তাই নয় একই সময়ে মুক্তি পাওয়া বলিউড সিনেমার চেয়ে ভালো ব্যবসা করছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণি সিনেমা দর্শক টানতে পারলেও হিন্দি বা বলিউড সিনেমা কেন পারছে না তা বুঝতে পারছেন না সুপারস্টার সালমান খান। এই অভিনেতা বলিউডে অসংখ্য ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন।

অবশ্য ফিল্ম ট্রেড অ্যানালিস্ট তরণ আদর্শের কাছে এর একটি একটি সমাধান আছে। তিনি মনে করেন, আঞ্চলিক চলচ্চিত্রের সাফল্যের কারণ 'সুস্থ বিনোদন'।

দক্ষিণি চলচ্চিত্রের আধিপত্য নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলিউড লাইফকে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই চলচ্চিত্রগুলো সুস্থধারার বিনোদন উপহার দিচ্ছে এবং তাদের গল্প বলার ধরণও চমৎকার। একইসঙ্গে দক্ষিণি সিনেমাগুলো পারিবারিক বিনোদনের জন্য ভালো মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

কেজিএফ অভিনেতা যশ মনে করেন, এই পরিবর্তন একদিনে হয়নি। দক্ষিণের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের গল্প বলার ধরনের সঙ্গে উত্তরের দর্শকরা তাদের জীবনের মিল খুঁজে পান।

বলিউড লাইফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যশ বলেন, আজ যা হচ্ছে তা হলো- মানুষ আমাদের গল্প বলার ধরন ও আমাদের সিনেমার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। তাই এটা রাতারাতি হয়নি। এটি কয়েক বছর ধরে হয়েছে। তারা আমাদের বিষয়বস্তু, দিকনির্দেশনা সবকিছু বুঝতে শুরু করেছে। তারা এসএস রাজামৌলি স্যার ও প্রভাসের বাহুবলীকে দারুণভাবে গ্রহণ করে। এরপর কেজিএফের বেলাতেও সেটি হয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে এসে পুষ্পা, আরআরআর সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে।

তরণ আদর্শ বলছেন, হিন্দি চলচ্চিত্রগুলো সাধারণত বান্দ্রা থেকে ভারসোভার গল্পের বাইরে খুব বেশি আগ্রহী নয়। তাহলে বাকি ভারতের কী হবে? যারা সুস্থ বিনোদনের জন্য তৃষ্ণার্ত তাদের কী হবে? তাই এখন সময় এসেছে বলিউড সংশ্লিষ্টদের জেগে ওঠার। তিনি মনে করেন, মানুষ এখনো ইতিহাস নির্ভর কিংবা পারিবারিক সিনেমা দেখতে চান। তবে, তাতে অবশ্যই আবেগ এবং সঠিক গল্প থাকতে হবে।

চলচ্চিত্র বাণিজ্য বিশ্লেষক অক্ষয় রাঠি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, বলিউড সিনেমাকে অবশ্যই গল্পে মনোযোগী হতে হবে। যাতে দর্শকদের বড় একটি অংশ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যান। তিনি বিশ্বাস করেন, হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাতারা পুরো ভারতের দর্শকের জন্য সিনেমা তৈরির সক্ষমতা রাখেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও তারা তা করেছেন। এর প্রমাণ হলো- সূর্যবংশী, টাইগার জিন্দা হ্যায়, বজরঙ্গী ভাইজান এবং দঙ্গলের মতো মেগা-ব্লকবাস্টার সিনেমা।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহামারির পর আল্লু অর্জুনের 'পুষ্পা: দ্য রাইজ' সারা ভারতে ১০৮.২৬ কোটির বেশি রুপি আয় করেছে এবং বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৩৬৫ কোটির বেশি। পরে, এসএস রাজামৌলির 'আরআরআর' বক্স অফিসে ঝড় তোলে। সিনেমাটি ভারতে ২৪০.৭৯ কোটি রুপি এবং বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটির বেশি আয় করেছে। 'কেজিএফ চ্যাপ্টার-২' ভারতে প্রথম দিনে ১৩৪.৫ কোটি রুপি আয় করেছে। একই সময়ে মুক্তি পাওয়া বিজয়ের বিস্ট বিশ্বব্যাপী ২১০ কোটি রুপি আয় করেছে।

চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং ট্রেড প্রফেশনাল গিরিশ জোহর বলেন, দক্ষিণি সিনেমাগুলো দারুণ ব্যবসা করছে। তাও আবার কোনো বিশাল প্রচার কৌশল ছাড়াই। এটা অবশ্যই বলিউডের জন্য ভাবানার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

14h ago