‘বিজলি চরিত্রে অভিনয়ের পর ১০ বছর একা বের হতে পারিনি’

টেলিভিশন নাটকের প্রথিতযশা অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী। ১৯৯৪ সাল থেকে যুক্ত আছেন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। রোজী সিদ্দিকী অভিনীত দুটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে তিনি একাধিক ধারাবাহিক নাটক ও ওয়েব ফিল্মের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন রোজী সিদ্দিকী। সেই কথোপকথনে উঠে এসেছে তার অভিনয় ও বর্তমান ব্যস্ততার নানা বিষয়।
আপনার কোন নাটকটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল?
জন্মভূমি ধারাবাহিক নাটকটি আমার অভিনয় জীবনের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। জন্মভূমি নাটকটির নাট্যকার ছিলেন প্রয়াত আমজাদ হোসেন। প্রযোজনা করেছিলেন ফখরুল আবেদিন দুলাল। ওই নাটকের আমি একটি সংলাপ দিতাম- 'এম এ পাশ ফাস্ট ক্লাস'। এই সংলাপটি তখন মানুষের মুখে মুখে ফিরত। ১৯৮৯ সালে নাটকটি প্রচার হয়। এখনো মানুষ আমাকে বিজলি চরিত্রটির কথা বলেন। কোথাও গেলে বিজলি নামে ডাকেন। জন্মভূমি সারাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছিল। নাটকটি প্রচার হওয়ার পর ১০ বছর একা একা ঘর থেকে বের হতে পারিনি। কেননা- আমাকে দেখে প্রচুর মানুষ ভিড় করতেন। আমার বয়স তখন ১৬ বছর। জনপ্রিয়তার কিছুই বুঝি না। অন্তত ৫ বার পুলিশ ভিড় থেকে আমাকে উদ্ধার করেছেন। কোথাও বের হলে বাসা থেকে কাউকে নিয়ে বের হতাম।
টেলিভিশন নাটকে প্রেমিকা, বোন, ভাবী, মা সব ধরণের চরিত্রে আপনি অভিনয় করেন, মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না?
সমস্যা কেন হবে। অভিনয়ে বৈচিত্র্য আনতে পারাই একজন শিল্পীর কাজ। তাই প্রেমিকা হোক, ভাবী হোক আর বোন হোক অথবা মায়ের চরিত্র হোক- সবরকম চরিত্রে অভিনয় করতে পারি আমি। মঞ্চ থেকে আমি এটা শিখেছি। আমার অভিনয়ে মঞ্চের অবদান অনেক। এভাবেই আমি সব চরিত্রে অভিনয় করে যেতে চাই।
আপনি তো এখনো মঞ্চে সরব...
থিয়েটার আমার নেশা। রিয়েল অভিনয় যদি শিখে থাকি তা থিয়েটারে শিখেছি। থিয়েটার কখনো ছাড়তে পারব না। সারাজীবন করে যাব। আমি মনে করি থিয়েটার আমার জন্য ইনস্টিটিউট।
মঞ্চে পঞ্চনারী আখ্যান নাটকটিতে আপনি এককভাবে অভিনয় করেছেন, এটা কতটা কঠিন?
পঞ্চনারী আখ্যান নাটকটি আমার একক অভিনয়ের নাটক। এটা শুরু করেছিলাম ভার্জিনিয়ায়। তারপর দেশে শো করি। এখন পর্যন্ত ৭৮টি শো করেছি। সর্বশেষ গত মাসে ঢাকায় শো করেছি। একক নাটকে অভিনয় শুধু কঠিন না, ভয়ঙ্কর রকমের চ্যালেঞ্জিং। প্রতিবার শো শেষ করে মানুষের কান্না শুনি। প্রতিবার শো করে ভাবি আমার নতুন জন্ম হলো।
টিভি নাটক অনেক অভিনয় করলেও সিনেমায় কম কেন?
আমার ২টি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। আমি আসলে সিনেমায় অভিনয় করতে চাই। এখন আমার সন্তানরা বড় হয়েছে। সিনেমায় অভিনয় করার সময় এখন। ওরা ছোট থাকতে খুব সময় করতে পারিনি। তবে, অবশ্যই গল্প ও চরিত্র পছন্দ হতে হবে।
অভিনয় জীবনে কোনো শিল্পীর কথা কি মনে দাগ কেটে আছে?
হুমায়ুন ফরীদি ভাইয়ের একটি কথা আজও আমার মনের ভেতরে গেঁথে গেছে। আমাকে এজন্য আবার জন্মভূমি নাটকের বিজলি চরিত্রের কথা বলতে হবে। তখন একা বের হতে পারতাম না। একদিন ফরীদি ভাই আমাকে অনেক বোঝান। তিনি বলেন, তুই তো ভাগ্যবতী এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করে। সবার কপালে এত জনপ্রিয়তা লেখা থাকে না। রমজান চরিত্রটি যেমন সবার মনে দাগ কেটেছে, বিজলি চরিত্রটিও। তুই এখন থেকে একা একা চলবি। শপিং করবি, বাইরে বের হবি। ফরীদি ভাইয়ের কথাগুলো আজও খুব মনে পড়ে।
Comments