মারমেইড বীচ রিসোর্ট: হৃদয়ে যার সাগরের সুরজাল

​সাগর, বালুকাবেলা, বৃষ্টি, চাঁদ, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং নির্জনতা—প্রকৃতির সব সৌন্দর্য ঠিক এক জায়গায় বসে উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে হবে মারমেইড বীচ রিসোর্টে। চোখের সামনে অপূর্ব এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় বুঝতেও পারা যায় না।

সাগর, বালুকাবেলা, বৃষ্টি, চাঁদ, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং নির্জনতা—প্রকৃতির সব সৌন্দর্য ঠিক এক জায়গায় বসে উপভোগ করতে চাইলে চলে যেতে হবে মারমেইড বীচ রিসোর্টে। চোখের সামনে অপূর্ব এই দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় বুঝতেও পারা যায় না। সকালে উঠে শুনলাম কিছুটা দূর থেকে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম সমুদ্র এসে গেছে চোখের সামনে। দু’পা হাঁটলেই নীল সমুদ্র আপনার পা ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। সমুদ্র দেখতে দেখতে যখন নাস্তা বা বিকেলের চা খাচ্ছেন, তখন পেছনে বেজে চলেছে সুরের মূর্ছনা।

মারমেইড বীচ রিসোর্টটি যেহেতু কক্সবাজার মূল শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে—সেখানে সাগরের পাড় ঘেঁষে যে পথ দিয়ে যেতে হয় তার একদিকে ঢেউ, সমুদ্রের গর্জন, ঝাউ-নারকেলের সারি, অন্য পাশে পাহাড়। এই রিসোর্টে ঢোকার পর আপনি ভুলেই যাবেন কোথা থেকে, কতটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনি এখানে এসেছেন। পৃথিবীর কোন কোলাহল, চিন্তা-ভাবনা আপনাকে আর স্পর্শ করতে পারবেনা। ফুল, লতাপাতা দিয়ে ঘেরা বারান্দায় আপনাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে ডাব আর ফুল দিয়ে। ঢোকার মুখে লেখা আছে –“জগতে সুখী হতে হলে চাই ভালবাসা।”

শুনশান নীরব এই রিসোর্টটিতে রয়েছে অনেকগুলো কটেজ। সাজানোর ঢংটা থাই ও ইন্দোনেশীয় স্টাইলে হলেও, কটেজগুলো সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় জিনিস দিয়ে। দারুণ সব হারিকেন ও কাগজে মোড়ানো বাতি, চারিদিকে বড় বড় গাছ, ফুলের গাছ, সবজী বাগান—এককথায় বলতে হয় এলাকাটি ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়। ঘরের ভেতরের ডেকোরেশনও ফাটাফাটি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে-তকতকে। পুরো রিসোর্ট জুড়ে অসংখ্য ফ্রেসকো ও দেয়াল চিত্র। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট জলাধার। তাতে ফুটে আছে নীল পদ্ম। কটেজের সাথে লাগোয়া সুইমিং পুল। কোনকিছুরই অভাব বোধ করবেন না টুরিস্টরা।

সুন্দরের পাশাপাশি আর যে দিকটি আমাকে মোহিত করেছে, তা হচ্ছে এই রিসোর্টের ফ্যাসিলিটিগুলো। পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে ছোট ছোট কিন্তু খুবই প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের দিকে নজর দেয়া হয়েছে, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি। যেমন , এখানে-সেখানে অনেক বসার জায়গা, সাগরের পাশ ঘেঁষে ছোট ছোট তাকিয়া, সাগরের মধ্যে জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন আকৃতির বসার জায়গা তৈরি করা আছে। এর মানে হচ্ছে আপনি যেন যেখান থেকে ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে, যখন ইচ্ছা সাগর দেখতে পারেন। শুধু কি চেয়ার ? আছে লেখার টেবিল, ছবি আঁকার জন্য ইজেল এবং সবচেয়ে বড় কথা পানির বোতল, যাতে হঠাৎ পানির পিপাসা পেলে হাতের কাছেই পাওয়া যাবে পানি। আর আছে জায়গায় জায়গায় অসংখ্য প্লাগ পয়েন্ট, যেন কোনকিছুতে চার্জ দিতে হবে বলে আড্ডায় বা গল্পে বিঘ্ন না ঘটে। দূরের কটেজে যাওয়ার জন্য টুকটুক রাখা আছে এবং সেই টুকটুকে সহজে ওঠার জন্য আছে ছোট টুলের ব্যবস্থাও। আহ কি যে আরাম!

খাওয়ার জায়গাটা অনেক বড় এবং খুব সুন্দর করে সাজানো। নানাধরনের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায়—বাঙালি, ইংলিশ, চাইনিজ, মেক্সিকান, ইটালিয়ান, ইন্ডিয়ান। ফল আর জুসের ছড়াছড়ি। যে যা খেতে চায়, তাই খেতে পারবে। কোথাও বেড়াতে গেলে খাওয়া-দাওয়াটা খুব প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। আর আমরা জানি সাগর বা নদীর বাতাস মানুষের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এখানে সুবিধা হল আপনি যেখানে খুশি সেখানে বসেই খাবারের অর্ডার দিতে পারেন, খাবার পৌঁছে যাবে। ভোর ৭ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত হেঁশেলে চুলা জ্বলছে। খরচ কেমন হতে পারে তা দেখার জন্য ভিজিট করুন রিসোর্টের ফেসবুক ও ওয়েবসাইট।

রিসোর্টের ঠিক মাঝখানে ও সমুদ্রের ধারে রয়েছে বাচ্চাদের জন্য দু’টো খেলার জায়গা। রয়েছে ছোটদের ও বড়দের জন্য বাই-সাইকেল। মন চাইলে সাইকেল নিয়ে পুরো জায়গাটা টহল দেয়া যাবে, সাগরের পাশ ঘেঁষে ঘুরে আসা যাবে। আর আছে কোয়াক, বীচ কার, ছোট ছোট নৌকা। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব ভাল। এখানে বেড়াতে এসে যার ইচ্ছা শুধুই আলসেমি করে সমুদ্র দেখবে, যার ইচ্ছা সমুদ্রে ঝাঁপাঝাঁপি করবে, বালু চরে দৌড়াবে, খেলবে, অথবা বাইরে গিয়ে আশপাশটা দেখে আসবে—এর কোনটাই কম আনন্দের নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago