মুক্তচিন্তার পথিক: আহমদ রফিক

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আহমদ রফিক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সে সময় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, যার ফলে তিনি কর্তৃপক্ষের রুদ্ররোষের শিকার হন।
আহমদ রফিক। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন আহমদ রফিক

আহমদ রফিক বাংলাদেশের সাহিত্য জগতের একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকার কর্মী। মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার আদর্শের প্রতি তার নিরন্তর অঙ্গীকারের জন্য তিনি সর্বস্তরে পরিচিতি ও বিশেষ সম্মান অর্জন করেছেন। তিনি ১৯২৯ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রাবন্ধিক, গবেষক ও ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছেন। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আহমদ রফিক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সে সময় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, যার ফলে তিনি কর্তৃপক্ষের রুদ্ররোষের শিকার হন।

তবে পরবর্তীতে রাজনীতির বদলে তিনি গবেষণা ও লেখনীর মাধ্যমে দেশের সেবা করার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের আদর্শের প্রচারে নিয়োজিত হন।

ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আহমদ রফিক বেশ কিছু বই লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য একটি বই হল 'ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য', যা তিনি ভাষা আন্দোলনের সহযোদ্ধা ও নেতা আবদুল মতিনের সঙ্গে যৌথভাবে লেখেন। এই বইতে ভাষা আন্দোলনের নিখুঁত ও বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ১৯৫৬ সালে দেশভাগের আগের ঘটনাগুলোও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে এটি এ বিষয়ের ওপর সবচেয়ে তথ্যবহুল বই হিসেবে বিবেচিত।

আহমদ রফিক বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও রচনার বিষয়ে প্রথম সারির একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন ও লেখনী সংক্রান্ত গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার কারণে কলকাতা-ভিত্তিক টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে 'রবীন্দ্রত্ত্বাচার্য' উপাধিতে ভূষিত করে।

২ বাংলার বিভাজনের ওপর আহমদ রফিকের লেখনী এই ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর নতুন ভাবে আলোকপাত করেছে। এ বিষয়ে তার সবচেয়ে পরিচিত বইগুলোর একটি হলো, 'দেশবিভাগ: ফিরে দেখা'। বইটি এর অন্তর্দৃষ্টিমূলক বিশ্লেষণ ও মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বহুল প্রশংসিত। এছাড়াও তিনি অসংখ্য সাহিত্যকর্ম ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র সম্পাদনার কাজ করেছেন, যেগুলো নিজ নিজ খাতে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ও অন্তর্দৃষ্টি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দ্য ডেইলি স্টার আহমদ রফিককে সম্মান জানাচ্ছে। একইসঙ্গে আমরা মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আদর্শের প্রতি তার জীবনভর সাধনাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। কীভাবে একজন ব্যক্তি কয়েক প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রতি আবেগ, অঙ্গীকার ও অবিচল সংকল্পের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আহমদ রফিকের জীবন ও তার কীর্তি।

Comments