কুড়িয়ে পাওয়া শিশু আনিশার জন্য আশার আলো

ছোট্ট শিশু আনিশার কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। গত মাসে ঢাকায় একটি ডাস্টবিনে তাকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল। তার ঘটনায় সংবেদনশীল মানুষের মনে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক, একজন নবজাতকের কী দোষ থাকতে পারে যার জন্য মানবতার ওপর থেকেই মানুষের আস্থা উঠে যায়, প্রশ্ন ওঠে সন্তানের সাথে মা-বাবার পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে?

গত ১১ মার্চ মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় আশুলিয়া-মিরপুর-বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে একটি ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় আনিশাকে। তখন কতই বা বয়স হবে, সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন। তার বয়স এখন এক মাসের কাছাকাছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল (নবজাতক) ওয়ার্ডই তার ঠিকানা।

নিওনেটাল ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড মনীষা ব্যানার্জি জানান, প্রতি বছর এরকম চার থেকে পাঁচটি শিশু তাঁদের ওয়ার্ডে আসে। আরও প্রায় ৩০টি অপরিণত নবজাতকের সাথে ওয়ার্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে (আইসিইউ) রয়েছে আনিশা। ডাক্তার ও নার্সরা সার্বক্ষণিক তাদের পরিচর্যা করছেন।

কিন্তু আনিশার গল্প অন্য ৩০টি নবজাতকের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। খুব সম্ভবত আনিশার বাবা-মায়ের কাছে সে ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত। আবর্জনার মতই তারা তাকে ডাস্টবিনে ফেলে যায়।

ড মনীষা জানান, আনিশাকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন পোকামাকড়ের কামড়ে তার সারা শরীরে লাল ফুসকুড়ি ছিলো। সেই সাথে জন্ডিস, রক্তে সংক্রমণ ও শ্বাস কষ্টে ভুগছিল সে।

“আমরা চাই কোন পরিবার তাকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করুক। কিন্তু জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ায় এখনই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়,” যোগ করেন মনীষা।

আরও পড়ুন: পরিবার পেল ‘একুশ’

তিনি আরও জানান, এখনও আনিশার ভবিষ্যৎ ঠিকানা নির্ধারণ হয়নি। তাকে দত্তক নিতে চারটি পরিবার আদালতে আবেদন করেছে।

“যেখানেই তার ঠিকানা হোক সে তার প্রাপ্য যত্ন, ভালোবাসা ও সুখ পাক আমরা সেই কামনাই করি।”

খাবার বলতে আনিশাকে শুধু দুধ খেতে দেওয়া হয়। সেটা হজমেও সমস্যা হচ্ছিল তার। প্রথম কিছুদিন বুকের দুধ দেওয়া হয়। এখন তাকে বাইরের দুধও দেওয়া হচ্ছে।

ডাক্তার জানান, “সবকিছুর পরও, যেদিন হাসপাতালে আনা হয়েছিল সে তুলনায় তার অবস্থা এখন অনেক ভালো। তবুও ১০০ শতাংশ বিপদমুক্ত সে কথা বলা যাবে না।”

তার ‘আনিশা’ নাম রাখার গল্পটাও একটু ব্যতিক্রমধর্মী। হসপাতালে আনার পর তার রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিতে রোগীর নাম প্রয়োজন হয়। জরুরি রক্তের দরকার হওয়ায় নিওনেটাল ওয়ার্ডেরই একজন নার্স তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম রাখেন আনিশা।

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে একমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল ওয়ার্ডে আধুনিক সব চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থার অর্থায়নে ওয়ার্ডটির আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ড মনীষা বলেন, হাসপাতালের এই ওয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়ানো হলে আমরা আরও বেশি সংখ্যক শিশুর চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো। এর জন্য সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত।

সবার আন্তরিক সেবায় সে এখন পর্যন্ত সব বিপদ কাটিয়ে উঠেছে এতেই আমরা খুশি। সেই সাথে বেশ কয়েকটি পরিবার তাকে তার প্রাপ্য ভালোবাসা দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত মানবিকতারই জয় হবে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

10h ago