পরিবার পেল ‘একুশ’

হতে পারে তার নাম ‘একুশ’ এই কারণে অথবা হৃদয়বান মানুষের সংখ্যা আমাদের ধারনার চেয়েও বেশি, চট্টগ্রামের ৩৭ দিনের শিশু একুশ সব হারিয়েও পেতে চলেছে পরিবারের ভালোবাসা, মায়ের স্নেহ।
কুড়িয়ে পাওয়া শিশু একুশকে পেতে একটি বা দুটি নয় মোট ১৬টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ১১ জন ‘মা’ গতকাল বন্দর নগরীর আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত শাকিলা আক্তারই আনন্দের অশ্রু নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আদালতের রায়ে ১৯ বছরের বিবাহিত জীবনে মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চলেছেন তিনি। তার কোল জুড়ে আসতে চলেছে একুশ।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস যিনি মহানগর শিশু আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিশু একুশকে শাকিলা দম্পতির কাছে দেওয়ার রায় দেন।
শারীরিক জটিলতার কারণে শাকিলার পক্ষে গর্ভে সন্তান ধারণ করা সম্ভব নয়। সন্তান ধারণ করতে না পারলেও ‘মা’ হওয়ার জন্য ১৯ বছর অপেক্ষা করেছিলেন তিনি। অবশেষে তিনি ও তার চিকিৎসক স্বামী জাকিরুল ইসলামের অপেক্ষার দিন শেষ হলো।
শাকিলা বলেন, “আমি কখনো ভাবিনি মা হতে পারবো। কিন্তু এখন আমার সন্তান রয়েছে। তাকে বড় করতে যা কিছু সম্ভব তার সব কিছু করবো আমি।”
আদালতের রায়ে মাত্র একজনের আশা পূরণ হলেও ঢাকার সাভার থেকে যাওয়া ইসরাত জাহান জানান, এই শিশুটির জন্য তার সব সময় শুভ কামনা থাকবে।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এমএ ফায়েজ জানান, দুইটি দিক বিবেচনা করে শাকিলা দম্পতিকে বেছে নিয়েছেন আদালত। প্রথমত শারীরিক কারণে কখনও সন্তান ধারণ করতে পারবেন না শাকিলা। দ্বিতীয়ত এই দম্পতির আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়টিও আদালত বিবেচনা করেছে।
তিনি আরও জানান, আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে একুশের জন্য ১০ লাখ টাকার শিক্ষা বীমা করতে বলেছেন আদালত। বীমার কাগজপত্র দাখিলের পর শাকিলা দম্পতির জিম্মায় দেওয়া হবে একুশকে।
এছাড়াও অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে প্রথমে তিন মাস ও ছয় মাস পর একুশের অবস্থা সম্পর্কে আদালতকে অবহিত করতে হবে। এর পর প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে আদালতে এসে একুশের ব্যাপারে রিপোর্ট দিতে হবে এই দম্পতিকে।
পিপি জানান, ভবিষ্যতে একুশের মা এসে তার সন্তান দাবি করলে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের মাধ্যমে প্রমাণ সাপেক্ষে শিশুটিকে তার বীমাসহ গর্ভধারিণী মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতের আগে চট্টগ্রামের কর্নেলহাটের প্রশান্তি আবাসিক এলাকায় একটি আবর্জনার কন্টেইনার থেকে সদ্যজাত একুশকে উদ্ধার করে আকবর শাহ থানা পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগির মাহমুদ তার নাম রাখে ‘একুশ’।
Comments