জুয়েল মারা যায়নি

আশকোনায় আত্মঘাতী হামলাকারী ফরিদপুরের জুয়েল নয় বলে জানা যাচ্ছে
জুয়েল রানা

রাজধানীর আশকোনায় গত শুক্রবার র‍্যাবের ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে বাহিনীটি যাকে সন্দেহ করছিল তিনি ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার জুয়েল রানা অলিভ নন। কিছু গণমাধ্যম বলছে জুয়েল বহাল তবিয়তেই আছেন।

গত শুক্রবার দুপুরে র‍্যাবের ব্যারাকে ঢুকে একজন নিজের শরীরে বাঁধা বোমায় বিস্ফোরণ ঘটায় বলে বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই হামলাকারী নিহত হয়।

বিস্ফোরণস্থল থেকে স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়া হামলাকারীর দুইটি আঙ্গুল থেকে ছাপ সংগ্রহ করা হয়। তার পরিচয় জানতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট অফিসে এই ছাপগুলো পাঠানো হয়।

ভোটারদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজের দায়িত্বে থাকা ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন উইংয়ের মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, তাদের কাছে যে নমুনা পাঠানো হয়েছে তাতে স্প্লিন্টারের অনেক দাগ রয়েছে। এর দ্বারা সম্পূর্ণভাবে কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।

তবে ডাটাবেজে থাকা এক ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপের সাথে এই নমুনার কিছুটা মিল পাওয়া যায়। র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, এর ওপর ভিত্তি করেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবা-মাসহ জুয়েলের পরিবারের পাঁচ জন সদস্যকে তাদের ফরিদপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়।

ফরিদপুরে একই পরিবারের পাঁচ জনকে আটকের পর কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় জুয়েলই আত্মঘাতী হামলাকারী হতে পারেন।

র‍্যাব পরবর্তীতে ঢাকার দোহারে জুয়েলের বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি জানান জুয়েল অক্ষত রয়েছেন। এর পর র‍্যাব জুয়েলের সাথে কথা বলে তাদের সাথে দেখা করতে বলে।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, জুয়েল তাদের সাথে দেখা না করে ফোন বন্ধ করে রাখেন। এতে জুয়েলের খোঁজে অভিযানও চালায় তারা।

জুয়েল এর পর সোমবার হঠাৎ করে ঢাকায় কিছু গণমাধ্যমের সাথে দেখা করে জানায়, ঘটনা যেভাবে গড়াচ্ছে তাতে অনিরাপদ বোধ করায় তিনি র‍্যাবের সাথে দেখা করেননি।

একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে তিনি বলেন, “র‍্যাব আমাকে মৃত বানিয়ে ফেলেছে কিন্তু আমি বাঁচতে চাই।” এসময় তাকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখা যায়। নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে তিনি বলেন, ভয়ের কারণে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন।

এ ব্যাপারে র‍্যাবের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, বিস্ফোরণস্থল থেকে সংগ্রহ করা আঙ্গুলের ছাপের সাথে জুয়েলের আঙ্গুলের ছাপ মিলেছে। তবে র‍্যাবের বক্তব্য নাকচ করেছেন এনআইডি নিবন্ধন উইংয়ের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। দ্য ডেইলি স্টারের সাথে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “আঙ্গুলের ছাপ পুরোপুরি মিলেছে এমন কথা কেউ বলেনি।”

তিনি বলেন, কাউকে পুরোপুরিভাবে চিহ্নিত করতে যে পরিমাণ নমুনা দরকার সেটা পাওয়া যায়নি। দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিস মিলে গেলেই কেবল একজনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

“আমরা প্রথম আঙ্গুলটির মাত্র ছয় শতাংশ ছাপ পেয়েছিলাম। আর দ্বিতীয় আঙ্গুলের ছাপের অবস্থা এর চেয়ে সামান্য ভালো ছিলো।”

তিনি বলেন, জঙ্গিদের চিহ্নিত করার কাজে সহায়তা করতে র‍্যাবের সাথে চুক্তি থাকায় তারা জুয়েলের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছিল।

কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেললেও নির্বাচন কমিশনের ‘নিরাপদ’ ডাটাবেসে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের অপব্যবহার ‘প্রায় অসম্ভব’ বলে দাবি করেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের একটি হাসপাতালে চাকরি করেন জুয়েল। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে তিনি তার এনআইডি হারিয়ে ফেলেন। এর পর তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে থানায় যান। কিন্তু তিনি ফরিদপুর এনআইডি নেওয়ায় ঢাকার থানায় জিডি নেওয়া হয়নি।

জুয়েল বলেন, “বিষয়টিকে আমি গুরুত্ব দেইনি। আমি পাসপোর্ট দিয়ে সব কাজ চালাতাম।”

জুয়েল গত শুক্রবার জানতে পারেন তার গ্রামের বাড়ি থেকে পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে ফরিদপুরে র‍্যাব অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এর পরদিন তিনি মুন্সিগঞ্জ থেকে তার দোহারের বাসায় গিয়ে স্ত্রীর কাছে জানতে পারেন যে র‍্যাব তাকে খুঁজছে। র‍্যাবের কথামত তিনি ফোন করে বলেন তিনি আত্মঘাতী হামলাকারী নন। তবে তার কথা “বিশ্বাস না হওয়ায় তাকে দেখা করতে বলে র‍্যাব।”

এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ফোন বন্ধ করে দেন বলে দাবি করেছেন।

জুয়েলের বাবা আলমগীর বলেন, এর মধ্যেই তিনি ও তার স্ত্রীকে ঢাকায় র‍্যাব-১ এর সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জুয়েলসহ আরেকজনের ছবি দেখানো হয় তাদের। ছবি দেখে ছেলেকে চিহ্নিত করলেও ছবিতে থাকা অন্যজনকে তারা চিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। র‍্যাব তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

1h ago