তিন দিনেই খেল খতম, বিব্রতকর ইনিংস হার

আউট হয়ে ফিরছেন লিটন। ছবি: এএফপি

আগের দিনই বোঝা গিয়েছিল তিনদিনেই টেস্ট হারতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবং তা ইনিংস ব্যবধানেই। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা বটে। তবে এতটা অনিশ্চয়তা তো আর নেই। না, লিটন দাসের আশাবাদ ফলেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ছয়শ রান তো দূরে থাক দুশো রানও করতে পারেনি। টেনেটুনে ১৭২ করেই খেল খতম।  ব্লুমফন্টেইন টেস্টে হার ইনিংস ও ২৫৪ রানের। দুই ইনিংসে মিলিয়ে ১০ উইকেট তুলে গর্জন করেছেন কাগিসো রাবাদা। টেস্ট হারের সঙ্গে সিরিজেও হোয়াটওয়াশ হয়েছে মুশফিকুর রহিমের দল।  

তৃতীয় দিনেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নেমেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মিশন বাস্তবায়নে। কেউ বাইরের বল খেলে আউট হয়েছেন। কেউ ভেতরে ঢুকা বল ছেড়ে হয়েছেন কুপোকাত। পরিকল্পনাহীন, তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ের ফল যা হওয়ার কথা তাই হয়েছে। পুরো টেস্ট জুড়েই দৃষ্টিকটু ভুলে ভরা ছিল মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্ব। টস থেকে শুরু করে বোলিং বদল। ফিল্ডিং সাজানো। সংবাদ সম্মেলনের বোলারদের নিয়ে বেফাঁস কথা। খেলার মধ্যেই নিজের উপর চাপ বাড়িয়েছেন মুশফিক। তাতে ডুবেছে পুরো দল। 

ইনিংস পরাজয় এড়াতেই দরকার ৪২৬ রান। এমন অবস্থায় নেমে আগের দিন দুই ওপেনার ৭ রান তুলে কোনমতে পার করেছিলেন। তৃতীয় দিন সকালেই আর উইকেট পতন থামানো গেল না। দ্রুত দুই উইকেট পড়ল। খানিকপর আরেকটি। ৬৩ রানে তিন উইকেট হারানো দলকে দিশা দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন দুই সিনিয়র মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ২৯ রানের বেশি উঠেনি তাদের জুটিতে।

দিনের শুরু হয় সৌম্য সরকারের দায়িত্বহীনতায়। নিজেকে হারিয়ে ফেরা এই ওপেনার ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করে আউট হন তিন রান করে। কাগিসো রাবাদার অনেক বাইরের বল ব্যাট না লাগালেই চলত। আত্মবিশ্বাসের অভাবেই কিনা ব্যাট ছুঁইয়ে দিলেন স্লিপে ক্যাচ।  দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেই ফিফটি করেছিলেন মুমিনুল হক। তাতেই বুঝি দায় শেষ তার! রাবাদার বলেই কাটা পড়েছেন ১১ রান করে।  ইমরুল কায়েস খেলছিলেন ভালই। ছন্দে ফিরতে তৈরি ছিল মঞ্চ। হেলায় হারিয়েছেন সুযোগ। ৩২ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। পারনেলের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন মুশফিক। তার আগে তাকে বাউন্সারে বিপর্যস্ত করেছেন অলিভিয়ার। মাটিতে লুটিয়েও পড়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। উঠে দাঁড়িয়ে পরে ব্যাট করেছেন। টেকেননি বেশিক্ষণ। পরে যেতে হয়েছে হাসপাতালেও। ম্যাচ শেষে অবশ্য মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়েছেন। বলেছেন শরীর ঠিক আছে। তবে মন কি আর ঠিক থাকে? হাসপাতালের যাওয়ার দশা যে পুরো বাংলাদেশ দলেরই।

দ্বিতীয় ইনিংসেও বড় কোন প্রতিরোধ আসেনি। লাঞ্চের পর ম্যাচের আয়ু বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর প্রথম ইনিংসের হিরো লিটন দাস। তাদের ৪৩ রানের জুটি ভেঙ্গেছে লিটনের বোকামোতে। আন্দেলো ফেলেকাওয়ের ভেতরে ঢুকা বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়েছেন ১৮ রান করে। মাহমুদউল্লাহ নিজের কাঁধে ভারি বোঝা বহন করেননি বেশিক্ষণ। ৪৩ রান করে গালিতে ক্যাচ উঠিয়েছিলেন। বাঁদিকে লাফিয়ে ছোবল দিয়েই যেন তা ধরে ফেলেন ডিন এলগার। রান পেতে সংগ্রাম করা সাব্বির রহমানকেও খেয়েছেন ফেলেকাও। টেল এন্ডাররা কিছুক্ষণ বিনোদন দিয়েছেন গ্যালারির দর্শকদের। তাতে দুশো পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। হয়ওনি।

প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন রাবাদা। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও তিন রান কম দিয়ে পেলেন সমান উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারের উইকেট সংখ্যকেও নিয়ে গেছেন তিন অঙ্কের ঘরে। টেস্টে সিরিজে বাংলাদেশকে রীতিমতো উড়িয়ে বুক চিতিয়ে মাঠ ছেড়েছে ফাফ ডু প্লেসির দল। 

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ৪২৮/৩ (মার্কারাম ১৪৩, এলগার ১১৩, আমলা ৮৯*, ডু প্লেসি ৬২*; শুভাশিস ২/৮৫, রুবেল ১/৯১)



বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪২.৫ ওভারে ১৪৭ ( লিটন ৭০, ইমরুল ২৬ ; রাবাদা ৫/৩৩, অলিভিয়ের ৩/৪০)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১.২ ওভারে ১৭২/১০ (মাহমুদউল্লাহ ৪৩, ইমরুল ৩২; রাবাদা ৫/৩০)

টস: বাংলাদেশ

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ও ২৫৪ রানে জয়ী 


ম্যান অব দ্যা ম্যাচ: কাগিসো রাবাদা 

Comments

The Daily Star  | English
DGFI involvement in enforced disappearances

2 years lost, life shattered

He was around 15 when he was picked up, a ninth grader.

9h ago