তিস্তা চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি নেই বলছেন ভারতের রাজনীতিকরা

রাজ্যের স্বার্থরক্ষার কথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করলেও খোদ ভারতের রাজনীতিকরাই বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা মনে করেন তিস্তা চুক্তি হলে পশ্চিমবঙ্গের কোনও ক্ষতি হবে না বরং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বাড়ালে দুই দেশের মানুষেরই উপকার হবে।

শুধু তাই নয়, তিস্তা ছাড়া বাকি যে নদী গুলোর পানি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেই নদীগুলোর পানি প্রকৃতির গতি অনুসারেই বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে ভারত সরকারের পানি দেওয়ার কোন প্রশ্নই নেই- এমনটাও দাবি করছেন দেশটির শীর্ষ রাজনীতিকরা।

দিল্লি ও কলকাতায় অবস্থান করা কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি, লোকসভার প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বামফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার এই প্রতিক্রিয়ার পেয়েছে।

কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আমি মনে করি না তিস্তার জল বাংলাদেশে গেলে এমন বিশেষ কিছু ক্ষতি হবে উত্তরবঙ্গে। তিস্তার জলে এমন কোন গভীরতা নেই যে তিস্তার জল ছাড়া উত্তরবঙ্গে চাষ হবে না, এটা যদি কেউ দাবি করেন তিনি ভুল করছেন। উত্তরবঙ্গে কৃষিকাজের জন্য যে নদী ব্যবহৃত হয় সেটি তোর্সা, মহানন্দা এবং এই ধরনের আরও ছোটছোট নদী। তিস্তায় কৃত্রিম উপায়ে বাধ তৈরি করে বাংলাদেশে জল দেওয়াই যায়। প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, যৌথ নদী কমিশনকে এই বিষয়ে সক্রিয় করা প্রয়োজন রয়েছে। তারাই খুঁজে বের করুক, কি করে কোনও কৌশলে জল দেওয়া-নেওয়া যায়।”

কংগ্রেসের স্বরেই কথা বললেন বামফ্রন্ট নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিস্তা ছাড়া তোর্সা, জলঢাকাসহ উত্তরবঙ্গের নদীগুলোর জল দেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব করলেন। তিনি আসলে পশ্চিমবঙ্গের ভূগোলটাই জানেন না। জানলে এই ধরনের কথা বলতেন না।”

বামফ্রন্টের ওই তরুণ সাংসদ বলেন, যে নদীগুলোর প্রস্তাব করা হয়েছে সেই নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিই প্রকৃতিগতভাবেই পানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। উপরের নদী নিচের দিকে যাবেই। তাই মমতা ব্যানার্জির এই বিকল্প প্রস্তাবের কোনও যুক্তি খুঁজেই পাননি তিনি।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা অবশ্য তিস্তা চুক্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আত্মবিশ্বাসের মতোই তারও বিশ্বাসের কথা জানান। তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তখন তিস্তা চুক্তি একটু বিলম্বে হলেও হবে।”

এদিকে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলনকারী নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত উত্তরবঙ্গের নদী নিয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, তিস্তায় সেচ প্রকল্প এবং জলঢাকা হাইড্রো প্রজেক্টেও বাধ আছে। এছাড়া কোনও নদীতে কোনও বাধ নেই। তাই প্রকৃতির নিয়ম মেনেই উজান থেকে ভাটিতে জল গড়িয়ে পড়ছে। আর জলঢাকায় হাইড্রো প্রজেক্টের যে বাধ দেওয়া আছে সেটার জলও সেই বাধ থেকে ১০০ শতাংশ বেরিয়ে যাচ্ছে, ফলে সেখান থেকেও নদীর গতির মতোই জল যাচ্ছে বাংলাদেশে। তবে তিস্তায় সেচ প্রকল্পটা ক্যানেলের মধ্যদিয়ে ঘুরিয়ে নেওয়ায় সেখানে সমস্যা তৈরি হয়েছে বৈকি।”

“আসলে মমতা ব্যানার্জি নদী নিয়ে তেমন গভীরভাবে জানেন না। তাই তিনি উত্তরবঙ্গের ছোট ছোট নদীর জল দেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব করেছেন। ওই নদীর প্রত্যেকটিই বাংলাদেশে প্রবাহিত হচ্ছে তার নিজের মতোই,” যোগ করেন তিনি।

এদিকে তিস্তা ছাড়া বিকল্প নদীগুলো দিয়ে বাংলাদেশেকে পানির হিস্যা দেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারে কোনও প্রক্রিয়া জানাতে রাজি হননি। কল্যাণ রুদ্র বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ পর্ষদের চেয়ারম্যান। ২০১২ সালে তিস্তার পানি বণ্টনের হিসাব কষতে এক সদস্যের কমিশন তৈরি করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেই কমিশনের প্রধান ছিলেন এই কল্যাণ রুদ্র। ৯০ দিনের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টনের হিসাব প্রকাশ করার কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি সেই রিপোর্ট।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh smash 7 past Turkmenistan

Bangladesh team had reserved their celebration of clinching Asian Cup berth till the last match of the campaign. On Saturday, against Turkmenistan, they celebrated the epic achievement with a resounding 7-0 victory, ending the Asian Cup Qualifiers campaign with an all-win record at the Thuwunna Stadium in Yangon.

3h ago