সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত

দার্জিলিং অশান্ত, আটকে পড়েছেন ৫০ হাজার পর্যটক

Darjeeling
পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল দার্জিলিং অশান্ত হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি শান্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ছবি: স্টার

পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চল দার্জিলিং অশান্ত হয়ে পড়েছে। পর্যটন মৌসুমে অশান্ত পাহাড়কে শান্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনরত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা দার্জিলিং জেলায় ১২ ঘণ্টার জন্য হরতালের ডাক দিয়েছে শুক্রবার।

পশ্চিমবঙ্গের কার্শিয়াং, কালিংপঙ এবং দার্জিলিং মিলিয়ে পার্বত্য অঞ্চল। প্রতিবেশী বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভুটানসহ ভারতের অন্য রাজ্যগুলো থেকেও এই মুহূর্তে কমপক্ষে ৫০ হাজার পর্যটক রয়েছেন সেখানে। চলমান অশান্ত এই পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের অনেকে পাহাড় ছেড়ে সমতলে ফেরা শুরু করেছেন। তবে সন্ধ্যার আগে যাঁরা রওনা হয়েছিলেন তাঁরা ফিরতে পারলেও সন্ধ্যার পর রাস্তা বন্ধ থাকায় শুক্রবার ছাড়া তাঁদের ফেরার কোনও সুযোগ নেই।

এদিকে শুক্রবার মোর্চা হরতাল ডাক দেওয়ায় সেখানে আটকে পড়া পর্যটকদের অবস্থা আরও উদ্বেগজনক হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। নির্বিচারে ভাঙচুর করা হয়েছে পাহাড়ের দোকান-অফিসঘর। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদস্যরা।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও বেশ কয়েক দফায় লাঠিচার্জ করে। এমন কি বেশ শতাধিক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটায়।

ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে। দার্জিলিংয়ের রাজভবনের পাশে একদল মোর্চা সদস্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কুশপুত্তলিকা দাহ করার সময় সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। সেই সময় পুলিশের উপর চড়াও হয় মোর্চার সদস্যরা। রাজভবনে তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তাঁর মন্ত্রীসভার জরুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমতল থেকেও প্রচুর সংখ্যক পুলিশ পাহাড়ে মোতায়েনের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যার আগে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য অঞ্চলে নামানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মন্ত্রিসভার বৈঠকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পাহাড়ে পর্যটক থাকেন। পরিকল্পনা করে এই অশান্তি ছাড়ানো হয়েছে। কোনভাবেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই জঙ্গিপনা মেনে নেবে না। পাহাড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপদে সমতলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা নিবে বলেও মমতা ব্যানার্জি নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে, মমতা ব্যানার্জির সফর সঙ্গী কলকাতার সিনিয়র সাংবাদিক আশাবুল হোসেন জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আজই কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত রেখে তিনি কলকাতায় ফিরবেন না। তাই যে পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে ততক্ষণ সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পার্বত্য অঞ্চলেই থাকবেন।”

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে পার্বত্য অঞ্চলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে সমঝোতা করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরই তৃণমূলের সঙ্গে সেই সুসম্পর্ক সংঘাতের সম্পর্কে রূপ নেয়। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর থেকে গোর্খা মুক্তি মোর্চা বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার মোর্চার এই জঙ্গি আন্দোলন বিজেপির দেওয়া রাজনৈতিক অক্সিজেন বলেও মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

Talks with IMF: Consensus likely on exchange rate, revenue issues

The fourth tranche of the instalment was deferred due to disagreements and now talks are going on to release two tranches at once.

10h ago