ভাঙনে সব হারানো জয়নবদের ঈদ নেই

ঈদ কড়া নাড়ছে দরজায়। উৎসব আয়োজনে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সারাদেশের মানুষ। কিন্তু যমুনার প্রবল ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মাজজান গ্রামের মানুষের মনে ঈদের আনন্দ নেই। দুবেলা খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ তাদের কাছে। 
খোলা আকাশের নিচে চুলা জ্বালিয়ে ভাত রান্না করছেন জয়নব। ছবি: স্টার

ঈদ কড়া নাড়ছে দরজায়। উৎসব আয়োজনে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সারাদেশের মানুষ। কিন্তু যমুনার প্রবল ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মাজজান গ্রামের মানুষের মনে ঈদের আনন্দ নেই। দুবেলা খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ তাদের কাছে। 

গত ১ জুলাই আকস্মিক ভাঙনে মাজজান গ্রামের ১৩টি বাড়ি মুহুর্তেই নদীগর্ভে চলে যায়। ঘরের আসবাব ও সঞ্চিত খাদ্যসহ কিছুই বাঁচাতে পারেনি পরিবারগুলো। এ ছাড়া ভাঙন থেকে বাঁচতে আরও প্রায় অর্ধশত পরিবার আশ্রয় নেয় বাধের ওপর। এখন পর‌্যন্ত সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।

মাজজান গ্রামের বাসিন্দা জুলফিকারের স্ত্রী জয়নব বেগম জানালেন, গত কয়েকদিন আশপাশের মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে আধপেটা খেয়ে কোনোভাবে দিন পার করেছেন তিনি।

মাজজান গ্রামের অনেকে ভাঙনে সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। ছবি: স্টার

গতকাল শুক্রবার জয়নবের সঙ্গে যখন এই প্রতিবেদকের কথা হয়, তখন তিনি খোলা আকাশের নিচে চুলা জ্বালিয়ে ভাত রান্না করছিলেন। সঙ্গে কয়েকটি আলু।

জয়নব বলেন, 'দুবেলা দুমুঠ সেদ্ধ ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। ঈদ নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই আমাদের।'

একই অবস্থা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রোজিনা খাতুনের। পয়লা জুলাইয়ের ভাঙনে রোজিনার ঘর, আসবাব, সঞ্চিত খাদ্য, অর্থ সব চলে গেছে যমুনার গর্ভে। কেবল পরনের কাপড়টুকু ছাড়া এখন আর কিছুই নেই তার।
এখন ৪ সন্তান নিয়ে বাঁধের রাস্তার ওপর আরেকটি পরিবারের সঙ্গে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন রোজিনা। তিনি বলেন, 'ঘরে ৬ মাসের খাবার ছিল। সব ভেসে গেছে। এখন সন্তানদের জন্য দুবেলা খাবার তুলে দেওয়ার জন্য আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। ঈদে ওদের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করার সঙ্গতি নেই।' 

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, এ বছরের বন্যায় এখন পর্যন্ত  জেলার ৯৭৪টি বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চৌহালি উপজেলা। কেবল এ উপজেলাতেই ৪৩৫টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। 
ভাঙনে নিঃস্ব রফিকুল বলেন, 'জনপ্রতিনিধিদের কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। জোটেনি কোনো ত্রাণ সহায়তা।' 

মাজজান গ্রামের অনেকে ভাঙনে সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। ছবি: স্টার

একই অভিযোগ ভাঙন কবলিত বামনগ্রাম, হাটপাচিল, ছোট কয়রা সহ বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান। তার দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে জেলার ৫ উপজেলায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯৭৪টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ঢেউ টিন ও নগদ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bank Asia plans to acquire Bank Alfalah

Bank Asia moves a step closer to Bank Alfalah acquisition

A day earlier, Karachi-based Bank Alfalah disclosed the information on the Pakistan Stock exchange.

1h ago