ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন সালমা বেগম
ভাইকে দেখে সালমা বেগমের প্রথম প্রশ্ন ছিলো তার আট ও ১০ বছরের দুই ছেলে কেমন আছে। “ক্ষুধা লাগলে কি তারা খাবার পায়? ওদের বাবা কি খাওয়াতে পারে?” গতকাল বাড়িতে পৌঁছানোর পর সবার আগে এই প্রশ্নগুলোই করেন তিনি।
৩৮ বছর বয়সী সালমা গত ২০ মাস ভারতের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। দেশে ফেরত পাঠাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় তাকে বেনাপোল-পেট্রাপোল পয়েন্টে নিয়ে আসে। সীমান্তে তাকে নিতে এসেছিলেন ছোট ভাই আসগর আলী। ভাইকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সালমাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করছে কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ (সিএইচআরআই)। সংস্থাটির মতে, “পুলিশ, সুশীল সমাজ ও বিচার বিভাগের অনন্য যৌথ উদ্যোগের ফলে সালমার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।”
প্রায় পাঁচ বছর আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তালুক সর্বানন্দ গ্রাম থেকে থেকে নিখোঁজ হন সালমা। সেসময় মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এর পর চার বছর তার কোন খোঁজ পায়নি পরিবার।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবার জানতে পারে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলায় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি।
২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল হুগলী জেলা পুলিশ একটি গ্রামে সালমাকে পায়। গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। তবে পুলিশের সঙ্গে কথা না বলায় তার পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারেনি পুলিশ। সেখান থেকে তারা তাকে ‘জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্র’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে পাঠায়। সেখানেই তার কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফেরার সময় দ্য ডেইলি স্টার এর কলকাতা প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন সালমা। সেখানে থাকার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অন্যান্য বোনদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে আমার। ওদের কথা খুব মনে পড়বে।”
আশ্রয় কেন্দ্রে যত্ন নেওয়ার পর ধীরে ধীরে স্মৃতি ফিরে পান সালমা। তিনি লোকজনকে জানান তার বাড়ি বাংলাদেশে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দেশে ফিরতে তার বেশ কয়েক মাস সময় বেশি লেগেছে।
এই ঘটনা নিয়ে গতকাল সিএইচআরআই এক বিবৃতিতে বলেছে, “সালমা বেগমের ঘটনা দেখায় সীমান্তের দুই পাশেই বহু নিরপরাধ মানুষ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আটকা পড়ে রয়েছেন।” বিবৃতিটিতে আরও বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে সাথে করে সিএইচআরআই ও এর সহযোগী সংস্থাগুলোর এক বছরের বেশি চেষ্টার পর সালমাকে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
হুগলীতে অবস্থানকালে সালমা তার পরিবারের কথা জানানোর পর আশ্রয়কেন্দ্রটির প্রধান কাউন্সেলর বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করেন। বাংলাদেশ লিগাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) পরবর্তীতে সিএইচআরআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন ও পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা সালমার সঙ্গে কথা বলে নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। গত মাসে তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারিভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর দেওয়া তথ্য থেকে সিএইচআরআই জানায়, ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন কারাগারে ছয় হাজার ১৮৫ জন বিদেশি নাগরিক বন্দী ছিলেন। বন্দীদের মধ্য অর্ধেকের বেশি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কারাগারে যার মধ্যে আবার ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি।
তবে এই বন্দীদের মধ্যে ঠিক কতজন সাজা শেষ হওয়ার পরও আটক রয়েছেন তার কোন সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো।
Comments