‘মানসিকভাবে অসুস্থ ট্রাম্প’

ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও কাজের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রখ্যাত মনোরোগ বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন গণমাধ্যম।
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও কাজের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রখ্যাত মনোরোগ বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন গণমাধ্যম

কয়েক মাস আগেই এই প্রশ্ন তুলেছিলেন তারা। তবে গত সপ্তাহ থেকে তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে।

মঙ্গলবার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান টুইটে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘নিঃসন্দেহে মানসিকভাবে অসুস্থ’।

তবে ট্রাম্পের নীতির সোচ্চার সমালোচক এই মার্কিন অর্থনীতিবিদ নিজে মনোরোগ চিকিৎসক না হওয়ায় এক্ষেত্রে তার কথার গুরুত্ব হয়ত কম। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ক্রুগম্যান একা প্রথম কোন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলছেন না।

বেশ কিছু প্রখ্যাত মনোরোগ চিকিৎসক বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানসিক স্বাস্থ্যে কোন না কোন সমস্যা রয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল স্কুলের বিখ্যাত মনোরোগ চিকিৎসক জন ডি গার্টনার এদের মধ্যে একজন। তিনি বলছেন, ট্রাম্পের সমস্যাটি খুব গুরুতর। আমেরিকার কমান্ডার ইন চিফের মানসিক অবস্থা নিয়ে দেশের জনগণকে সতর্ক করেছেন তিনি।

গত ২৯ তারিখ নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ লিখেছে, “বড় দুটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের পর এ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানসিক অসুস্থতার বিষয়টি সামনে এসেছে।  তিনি ‘প্যারানয়া’ ও ‘ডিলিউশন’-এর মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলছেন, লক্ষ লক্ষ অবৈধ ভোট পড়েছে। এ থেকে বোঝা যায় বাস্তবতা থেকে দূরে রয়েছেন তিনি। মেক্সিকোর সাথে বিরক্তিকর বাণিজ্যিক টানাপড়েন প্রমাণ করে জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি ভাবমূর্তিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে শপথের দিনের সমাবেশের জমায়েত নিয়ে বিতণ্ডা তার শিশুসুলভ আচরণ প্রতিফলিত করে।”

যুক্তরাজ্যের দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট ৩০ জানুয়ারি ‘ম্যালিগন্যান্ট নার্সিসিজম: ট্রাম্পের মধ্যে মানসিক রোগের চিরাচরিত লক্ষণ বলছেন মনোবিজ্ঞানীরা’ প্রতিবেদনে বলছে, ট্রাম্পের বিপদ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করতে একমত হচ্ছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সিটিজেন থেরাপিস্ট মেনিফেস্টো মনে করে, ট্রাম্পের ঔদ্ধত্য আমেরিকার সফলতা নিয়ে ভুল বার্তা দিচ্ছে। ইনডিপেন্ডেন্টের রিপোর্টে শুধু এটুকু বলেই শেষ করা হয়েছে, “মানসিক সুস্থতার সঙ্গে কোনভাবেই ট্রাম্পইজম যায় না।”

মাস ছয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬০ বছর পুরনো ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিক যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তুলেছিল তা হলো: ট্রাম্প কি অসামাজিক? গত ২০ জুলাই ২০১৬ তারিখে তারা স্টিভ বেকার নামের এক মনোচিকিৎসকের বক্তব্য ছাপে। নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের বিশেষজ্ঞ তিনি। বেকার লিখেছেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যেখানে আমরা মনে করছি আমাদের রাজনীতিবিদরা উন্মাদের মত আচরণ করবেন।”

বেকার লিখেছেন, “ট্রাম্পের মানসিক অসুস্থতা শুধু রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সোজাসুজিভাবে তিনি একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছে।”

গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর মনোরোগ বিষয়ক তিন জন বিখ্যাত অধ্যাপক ডোনাল্ড ট্রাম্পের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পূর্ণ মূল্যায়ন করার লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। ওই অধ্যাপকরা ওবামাকে চিঠিতে লিখেন, “প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিতের মানসিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন আমরা। তবে পেশাদারিত্বের কারণে একজন সুপরিচিত ব্যক্তির ইচ্ছার বাইরে গিয়ে রোগ সনাক্ত করতে পারি না আমরা।”

তারা আরও লিখেছেন, “তার বহুল আলোচিত মানসিক অস্থিতিশীলতা—বাগাড়মবরপূর্ণ কথাবার্তা, আবেগ প্রবণতা, অতি সংবেদনশীলতা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের মানসিকতা ও কল্পনা-বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা— তার গুরু দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি করেছে।”

“আমরা স্পষ্টভাবে সুপারিশ করছি, দায়িত্ব গ্রহণের আগেই সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীনভাবে তার শারীরিক ও নিউরোসাইক্রিয়াটিক মূল্যায়ন করা দরকার।”

গত ১৭ ডিসেম্বর ওবামাকে লেখা তিন অধ্যাপকের চিঠি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে হাফিংটন পোস্ট। কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজিস্ট ও “ওয়ার্ডস দ্যাট শুক দ্য ওয়ার্ল্ড” বইয়ের লেখক রিচার্ড গ্রিন সেখানে বলেছেন, তিনি যতজন মানসিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের সবাই সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন, নিরাময় অযোগ্য মানসিক রোগ ‘ডিএসএম’ এর সবগুলো শর্তই পূরণ করেন ট্রাম্প। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্বের জন্যই তিনি বিপদের কারণ হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি গণমাধ্যম ইউএসএ টুডে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন তুলেছে। সেটি হলো: কী হবে যদি ট্রাম্প মানসিক ভারসাম্য হারান?

দৈনিকটিতে ২৩ জানুয়ারি প্রকাশিত এক নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ট্রাম্পের মানসিক অবস্থা নিয়ে বেশ কিছুদিন আলোচনা চলবে। ট্রাম্পের কৌশল বুঝতে গণমাধ্যমের সমস্যার হলেও সিআইএ’র উদ্দেশ্যে তার হতবুদ্ধি করা বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে বাস্তবতা থেকে দূরে রয়েছেন তিনি।”

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, “সমস্যা চিহ্নিত করার যত কাছেই যাই না কেন আমরা, ৭০ বছর বয়সী একজনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। অতীতেও আমেরিকায় প্রেসিডেন্টদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো, অবশ্য ওগুলোর বেশিরভাগই ছিলো শারীরিক।

তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বইয়ের প্রকাশকদের ভালোই হয়েছে বলতে হয়। গত ২৯ জানুয়ারির এক রিপোর্টে বিবিসি জানায়, ট্রাম্পের কারণে ডিসটোপিয়ান ফিকশন প্রকাশকদের বিক্রি বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে ব্যবসায়িক সাফল্যের উপায় নিয়ে ট্রাম্পের লেখা বইয়েরও বিক্রি বেড়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি পলিটিকাস ইউএসএ সঙ্গত কারণেই লিখেছে, ট্রাম্পের মানসিক সমস্যা তাকে কুখ্যাত অত্যাচারী একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফি, অ্যাডল্‌ফ হিটলার ও সাদ্দাম হোসেনের কাতারে নিয়ে আসে।

Click here to read the English version of this news

Comments