মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ উদ্ধারে ব্যর্থ সিঙ্গাপুর প্রবাসী আহত শ্রমিক
![Sujan Sujan](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/sujan-1.jpg?itok=TlJ9XRSX×tamp=1485163616)
প্রবাসী বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক সুজন আহমেদের আশা ছিলো, সিঙ্গাপুরের শ্রম আদালতের নির্দেশে তার প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন তিনি। কিন্তু রিজওয়ে ম্যারিন অ্যান্ড কন্সট্রাকশন নামের যে প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করতেন তারা তাকে হতাশ করেছে।
২০১৫ সালের মে মাসে কাজ করতে গিয়ে পড়ে আহত হয়ে চিরস্থায়ী পঙ্গুত্বে ভুগছেন ৩৪ বয়সী এই যুবক। এখন তার সামনে যে পথটি খোলা রয়েছে তা হলো সিঙ্গাপুরের আদালতে মালিকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন করা। কেননা, আহত হওয়ার পর থেকে তিনি কোন কাজ করতে পারছেন না।
সিঙ্গাপুরের জনশক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, “শ্রম আদালত এর আগেও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার জন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকদের এই ধরণের নির্দেশ দিয়েছিল। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের পাওনা সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবির সুরাহা করা হয়।”
সুজানের এই মামলাটি এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ঘটনা। যা দেশটিতে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় মালিকদের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে।
গত সপ্তাহে দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়, জিওসরে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান একজন শ্রমিকের বকেয়া বেতন হিসেবে ৭ হাজার ৩৬৩ মার্কিন ডলার শোধ করার শ্রম আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে মন্ত্রণালয় সেই মালিকের সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা তুলে নেওয়ার কথা বলে।
সুজানের এই করুণ-কাহিনী শুরু হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। তখন টেক্কা মার্কেটে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসাতে গিয়ে তিন মিটার উঁচু একটি মই থেকে যান তিনি। তখন তার প্রতিষ্ঠানের মালিক সূর্যকুমার রিজওয়ে তাকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
এক সপ্তাহ পরে দেখা যায়, সুজানের কনুই ফুলে আছে এবং ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। তিনি বলেন, “মালিককে অনুরোধ করেছিলাম আমাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে দিতে।”
তান টোক সেং হাসপাতালে এক্স-রে করে দেখা যায় যে তার ডান কনুই ভেঙ্গে গেছে এবং তার পিঠে ব্যথা লেগেছে। এরপর হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে চলতে হয় তাকে। এক বছর পর হাসপাতালটি তার চিরস্থায়ী পঙ্গুত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
আহত হওয়ার এক মাস পর কর্মস্থলে আহত হওয়ার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।
সব দিক পর্যালোচনা করে দেশটির জনশক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সুজনকে ১১ হাজার ৬২৫ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। গত বছর অক্টোবরে ক্ষতিপূরণের সব টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দুই হাজার ৪৮০ মার্কিন ডলার তিনি হাতে পান।
মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা ক্ষতিপূরণের আংশিক অর্থ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মালিক তার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে বাকি অর্থ দিতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টারের সুজানের জন্য কাজের ব্যবস্থা ও বাকি অর্থ পাওয়ার বিষয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, “যাই হোক, বাস্তবতা বুঝে বিষয়টি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যেমন ধরুন প্রতিষ্ঠানটির কোন সম্পত্তি আছে কিনা আর তা কিভাবে বাজেয়াপ্ত করা যায়।”
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে জনশক্তি মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নিচ্ছে তারা। গত তিন বছরে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ছয়জন মালিকের বিরুদ্ধে এবং শ্রমিকদের ইনস্যুরেন্স না করার অপরাধে তিনজন মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে, সূর্যকুমারকে তার মোবাইল ফোনে ও তার অফিসে যোগাযোগ করে কাউকে পাওয়া যায় নি। এই ঘটনা থেকে অন্যান্য শ্রমিকরা সতর্ক হবেন এটাই আশা সুজনের।
Click here to read the English version of this news
Comments