মিয়ানমারের বৌদ্ধ-মুসলিম সম্প্রীতি বাড়াতে উদ্যোগ

মুফতি হাফিজ আলী
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে স্টেডিয়ামে আন্তধর্মীয় প্রার্থনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দেশটির মুসলিম নেতা মুফতি হাফিজ আলী। ছবি: এএফপি

চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেই দেশের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে মিয়ানমার। দেশটিতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শক্তিশালী করার আহ্বানকে সামনে রেখে সরকারিভাবে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এক ধর্মের মানুষের প্রতি অন্য ধর্মের মানুষের শত্রুতা ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে মঙ্গলবার আন্তধর্মীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সরকারের স্টেট কাউন্সেলর অং সাং সু চি নিজেই এর উদ্যোক্তা। স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষের উপস্থিতিতে বৌদ্ধ-মুসলিম-হিন্দু-খ্রিষ্টান প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর শপথ নেন।

ইয়াঙ্গুনের বৌদ্ধদের প্রধান ভিক্ষু ইদ্ধিবালা সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “একে অপরকে হত্যার পথ থেকে ফিরে আসুন, একে অপরকে নিপীড়নের পথ পরিহার করুন, একে অপরকে ধ্বংস করার পথ ত্যাগ করুন।” বক্তব্য শেষে তিনি মুসলিম নেতা মুফতি হাফিজ আলীর সাথে করমর্দন করেন।

দেশের সব মানুষের জীবন, শিক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের একান্ত দায়িত্ব বলে মনে করেন মুফতি হাফিজ। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, “দেশের জন্য সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা উচিত।”

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন স্টেডিয়াম
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্মেলনে ইয়াঙ্গুনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ সমবেত হন। ছবি: এএফপি

গত কিছু দিন থেকে ফের রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। গত সোমবারই প্রায় ১১ হাজার জন নতুন করে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছে। তারা বলছেন, মুসলিম গ্রামগুলোতে নতুন করে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলা ও খাদ্য সংকটের কারণে তারা রাখাইন ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এক নজিরবিহীন শরণার্থী সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ বর্মি সেনাবাহিনীর চলমান রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রায় সব মানবাধিকার সংগঠনও বলছে রাখাইনের অবস্থা গণহত্যার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিকভাবে এত সমালোচনা থাকলেও মিয়ানমারের ভেতরে বিশেষ করে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা সেনাবাহিনীর নিপীড়নকে একরকম সমর্থন দিয়ে চলেছে। সম্প্রতি বছরগুলোতে এই জাতীয়তাবাদীদের বাড়বাড়ন্ত চলছে দেশটিতে। ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিও এই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির পথেই হাঁটছে। ফলে জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র অংশ রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো মানুষের সংখ্যা বলত গেলে দেশটিতে এখন নগণ্য।

রাখাইনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলা ও এর জবাবে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। ছয় সপ্তাহ পার হয়ে যাওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ থামানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু দেশটিতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা দেশটির সরকার এবার সেই ক্ষততেই মলম লাগানোর উদ্যোগ নিলো।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

43m ago