রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা পেতে

আমাদের রক্তে শর্করার (ব্লাড সুগার) পরিমাণ সারাদিন ধরে অল্প মাত্রায় বাড়ে ও কমে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই ফারাকটা অনেক বেশি হতে পারে। শর্করা বেড়ে গেলে যেমন সমস্যা হয় তেমনি কমে গেলেও ঘটতে পারে বিপদ। রক্তে শর্করার সঙ্গে সম্পর্কিত জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে এর ভারসাম্যের বিষয়টি বোঝা জরুরি।
আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন এবং ইনসুলিন বা এরকম নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ নিয়ে থাকেন তাহলে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার বিষয়টি হয়ত আপনার পরিচিত। ডাক্তারি ভাষায় একে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। প্রতি ডেসিলিটার রক্তে শর্করার পরিমাণ ৭০ মিলিগ্রামের নিচে নেমে গেলে তখন তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়।
তবে রক্তে উচ্চ মাত্রায় শর্করা থাকলেও কখনো কখনো হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা যেতে পারে। রক্তে খুব দ্রুত শর্করা কমতে থাকলে ও দীর্ঘদিন থেকে উচ্চ মাত্রায় শর্করা থাকলে এমন উল্টো লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে খুব অল্প মাত্রায় কমে গেলেও শরীর ও মনের ওপর এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে। রক্তে ঘন ঘন শর্করা কমে যাওয়ার পরিণতি খুব মারাত্মক হতে পারে। এই ঘটনা বার বার ঘটলে শরীর এ সম্পর্কে সংকেত দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেও পারবেন না তার শর্করার মাত্রা কমে গেছে।
রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার কারণ ও লক্ষণ
স্বাভাবিকের চেয়ে কম ও দেরিতে খাবার খাওয়া, শারীরিক কাজে পরিবর্তন ও অনুপযুক্ত ডায়াবেটিসের ওষুধ রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। এমনকি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় ডায়াবেটিসের ওষুধ নিয়ে ফেললেও হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি ভুল করে অন্য কোন ইনসুলিন নেন বা একবার ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়ার পর আবার ভুল করে ওষুধ খান তাহলেও এটা হতে পারে। রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো:
• মাথা ঘোরা
• স্নায়বিক চাপ অনুভব, উদ্বেগ ও বিরক্তিকর অনুভূতি
• হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া
• ঘাম ও চামড়ায় আঠা অনুভব করা
• ক্লান্তি ও বিভ্রান্তির অনুভূতি
• মাথা ব্যথা
রক্তে শর্করা কমে যাওয়া প্রতিরোধে যা করতে হবে
এসব লক্ষণ থাকলে দেরি না করে প্রত্যেকেরই রক্তের শর্করা পরীক্ষা করানো উচিত। রক্তে যদি প্রতি লিটারে তিন মিলিমোলের কম শর্করা পাওয়া যায় (বা ডাক্তার নির্ধারিত মাত্রার কম) তাহলে সাথে সাথে নিচের যে কোন একটি ব্যবস্থা নিতে হবে।
• ৩-৪টি গ্লুকোজ ট্যাবলেট (প্রতি ট্যাবলেটে ৪-৫ গ্রাম গ্লুকোজ)
• আধা কাপ ফলের রস
• এক টেবিল চামচ চিনি, জ্যাম বা মধু
• ৭-৮টি ক্যান্ডি
লক্ষণ থেকে যদি মনে হয় রক্তে শর্করা কমে গেছে কিন্তু পরীক্ষার কোন সুযোগ নেই তাহলেও উপরের যে কোন একটি ব্যবস্থা নিতে পারেন। ব্যবস্থা নেওয়ার ১৫ মিনিট পর রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এতেও শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক না হলে আবার ১৫ গ্রাম শর্করা খেতে হবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসায় দেরি করা মোটেও নিরাপদ নয়। লক্ষণ দেখা যাওয়ার পরও চিকিৎসা করতে দেরি করলে রোগী জ্ঞান হারাতে পারেন ও জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
রক্তে শর্করা কমে যাওয়া এড়ানোর উপায়
• নিয়মিত খাবার, শরীর চর্চা ও ওষুধ গ্রহণ করতে হবে
• কোন বেলা না খেয়ে থাকা যাবে না
• রক্তে শর্করা কমে গেলে যেন জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে জন্য খাবার সঙ্গে রাখতে হবে
• নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করতে হবে
• ব্রেসলেট, নেকলেস বা পায়ের ব্রেসলেট ব্যবহার করুন যেন লোকে বুঝতে পারে আপনি ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিচ্ছেন
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার যত বিপদ
শরীরে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ খুব পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় এর লক্ষণগুলো থাকতে পারে। শর্করার মাত্রা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার পরও চিকিৎসা না করলে কোমা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে হৃদপিণ্ডের ছন্দপতন ও বৈদ্যুতিক সংকেতে পরিবর্তন ঘটতে পারে। ডায়াবেটিস সংক্রান্ত স্নায়বিক সমস্যায় ভোগা লোকজনের পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ফলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্তে শর্করার নিরাপদ মাত্রা জেনে তা বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত।
Comments