সবাইকে জানিয়েই যেতে চাই: মাশরাফি

যেভাবে টি-টোয়েন্টি থেকে আচমকা সরে গেছি সেভাবে সরতে চাই না। আমারও ব্যক্তিগত জীবনে সবকিছু আচমকা করার অভ্যাস। সেটা যদি না করি সবাইকে ঠিকমত জানিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি দিন ধরে খেলছেন। তার নেতৃত্বেই এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছে টাইগাররা। শুধুমাত্র ফাস্ট বোলিংই নয় নেতৃত্বের প্রতিভা, দলকে অনুপ্রেরণার মাধ্যমে উজ্জীবিত রাখার যে ক্ষমতা মাশরাফি বিন মর্তুজার রয়েছে তা বলতে গেলে এক রকম অনন্য। দ্য ডেইলি স্টার এর ক্রীড়া প্রতিবেদক মাজহার উদ্দিনের কাছে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ৩৩ বছরের মাশরাফি কথা বলেছেন তার সফলতার পেছনের দর্শন, পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে।

সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ এখানে তুলে দেওয়া হল:

দ্য ডেইলি স্টার: খেলোয়াড় হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজা এখন নিজেকে কোথায় দেখেন?

মাশরাফি: কেউ বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, কিন্তু আমি একদম আগের মত, প্রথম যেভাবে এসেছিলাম, কিছুই চিনতাম না কিছুই বুঝতাম না, মানুষের সাথে মন খুলে মিশতাম, কথা বলতাম এখনো ওরকমই। আমার নিজেকে নিয়ে আলাদা করে ভাবার কোন সুযোগ হয়নি আর ভাবতে পারিও না।

দ্য ডেইলি স্টার: একজন ক্যাপ্টেনকে সফল হতে হলে তার মধ্যে কী কী দরকার?

মাশরাফি: ক্যাপ্টেন্সি করতে পারব কখনো ভাবিনি। তবে আমি কখনো কাউকে বলব না ক্যাপ্টেন হওয়ার চিন্তা করতে। এটা অনেকটা সেলফিস চিন্তা হয়ে যায়। দ্বিতীয় কথা যে আপনি ক্যাপ্টেন হলে সফল হবেন সেই গ্যারান্টিও থাকে না। অহেতুক নিজের ওপর চাপ তৈরি হয়। এটা এমন একটা প্রক্রিয়া সবকিছু যদি আপনার অনুকূলে থাকে আপনি এমনিই হবেন। এর জন্য আমি কাউকে বলব না ফিল (অনুভব) করতে। আমার নিজের চোখের সামনেই অনেক খেলোয়াড়কে দেখেছি তারা এমনটা করতে চাইত। কিন্তু তারা করতে পারেননি, খুব সম্প্রতি তারা টিম থেকে বাদ পড়ে গেছে। এই ডিজায়রটার আসলে থাকাটাই ঠিক না।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার সফলতার পেছনে কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে বলে মনে করেন?

মাশরাফি: খেলাটার প্রতি ভালোবাসা সব খেলোয়াড়েরই আছে; ওটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, যখন ইনজুরিতে পড়েছি তখন হতাশা এসেছে। কিন্তু যখন ফিরেছি তখন আরও বেশি স্ট্রং হয়ে ফিরেছি। এ কারণে যে আমি খেলতে চাই, এটা সব সময়ই আমার ভিতরে ছিল। আরেকটি জিনিস বলতে পারেন, আমার শুরু থেকে দুর্জয় ভাই ক্যাপ্টেন ছিল তখন থেকে দলের যোগ দেওয়া শেষ খেলোয়াড় মিরাজ পর্যন্ত সবার সাথেই আমি মিশতে পারি। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য খুব স্পেশাল ছিল।

দ্য ডেইলি স্টার: অন্যান্য সিনিয়র খেলোয়াড়দের যেমন জুনিয়রদের সাথে একটা দূরত্ব থাকে আপনার মধ্যে সেটা না নেই দেখেই কি অনেক সহজ হয়েছে ব্যাপারটা?

মাশরাফি: নড়াইলে আমি যখন ক্লাস সেভেন-এ পড়তাম তখন ক্লাস টেন-এ পড়া আমার বন্ধু ছিল। আবার দেখা গেল আমি যখন টেন-এ পড়ি তখন আমার কোন বন্ধু ক্লাস সিক্স-এ পড়ে। এরকম আমাদের ফ্রেন্ড ব্যাচ ছিল। এটা একটু আজব মনে হতে পারে। তিন ক্লাস কম-বেশি সাধারণ ব্যাপার না। ব্যক্তিগত জীবন থেকে এখন পর্যন্ত এভাবেই চলছে। মিশতে গেলে কখনও এটা নিয়ে ভাবি না। মিরাজ আমার থেকে প্রায় অর্ধেক বয়সী হবে এটাও ভাবি না। যেটা বলা দরকার বলে ফেলি।

দ্য ডেইলি স্টার: সবাই বলে এটাই আপনার জীবনের সেরা সময়। আপনার খারাপ সময় কোনটা ছিল?

মাশরাফি: ভালো সময় কি না বলতে পারছি না। ইনজুরির সময়গুলো কঠিন ছিল তবে সেগুলোকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখেছি। বেঁচে আছি এটাই অনেক কিছু। সে জন্যই খারাপ সময় হিসেবে কোন কিছুকেই দেখি না।

দ্য ডেইলি স্টার: একজন খেলোয়াড়ের জন্য পরিবার কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

মাশরাফি: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সাহায্য বা পরিবারের সাথে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার কঠিন সময়ে খুব কাছের বন্ধু বাদে অন্য বন্ধুরাও হয়ত বুঝবে না। এ সময় কিন্তু পরিবার ছাড়া কেউ বুঝবে না। কারণ আপনি কখন ঘুমান, খান, চলেন, আপনি কোন কাপড় পরতে পছন্দ করেন এটা কিন্তু আপনার পরিবারই জানে। হয়ত একদিন খারাপ খেলেছেন; পরিবারের সাথে আছে, আপনার কোন সময়টা কেমন তারা কিন্তু এটা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। পরিবারটা এমন একটা জিনিস যেটা আপনার ক্যারিয়ারকে অনেক বড় করে দিতে পারে আবার ছোটও করে দিতে পারে।

দ্য ডেইলি স্টার: এখন অনেকেই আপনার বাসায় যায় বা অনেককেই সময় দিতে হয় বা মাঠের বাইরে অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়। এটা একটু কঠিন হয়ে যায় না?

মাশরাফি: আমার একটা সুবিধা হল প্র্যাকটিস ছাড়া আমি বাইরে যাই না। বোর্ডের কোন কাজ বা পারিবারিক কাজ না থাকলে কখনো বের হই না। খেলা বাদে যতক্ষণ বাসায় থাকি বাচ্চাদের সাথে আরামেই থাকি। ওই সময় কেউ আসলে সমস্যা হয় না। অনেক সময় দেখা যায় আমি বাসায় নেই অথচ কেউ এসে ফিরে যাচ্ছে। যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করি। একা মানুষ সবাইকে সামলানো কঠিন। আবার আপ্রাণ চেষ্টা করেও সবাইকে সমান খুশিও করা যায় না।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার ছেলেকে কি হিসেবে দেখতে চান?

মাশরাফি: অবশ্যই ক্রিকেটার না। তারপরও ওর ওপরই নির্ভর করবে ও কী হতে চায়। সবসময়ই বলে এসেছি সে যেন আমার আদর্শ না আমাদের পরিবারের আদর্শে বড় হয়; ভালোমানুষ হওয়ার চেষ্টা করে। তার পর ওর ওপর নির্ভর করবে সে কী হবে।

দ্য ডেইলি স্টার: আপনার কি মনে হয় ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশের হয়ে একটা ট্রফি নিতে পারলে স্বপ্ন পূরণ হবে?

মাশরাফি: খুব প্রয়োজন মনে করি না। এমনও না যে সেই সুযোগ নেই। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত যদি খেলতে পারি, যদি তখন পর্যন্ত সুস্থ থাকি তাহলে সেই সুযোগও থাকছে। কিন্তু সেটা কখনোই আমার জন্য জরুরি মনে করি না। শুধু সাংবাদিকরা না অনেকেই বলেছেন তোমার একটা ট্রফি জেতা উচিত। কিন্তু কখনওই সেভাবে দেখিনি। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল টিমটাকে দাঁড় করানো। এটা অনেকটাই হয়েছে, এখন যতদিন থাকি যেন আরেকটু উপরে যেতে পারি। একটা ট্রফি দিয়ে দলকে বা একজন খেলোয়াড়কে বিচার করা যায় না। এমনটা যদি হত তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার কেউ খেলোয়াড়ই না। কিন্তু পৃথিবীর বেশ কয়েকজন কিংবদন্তী খেলোয়াড় দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নিয়েছেন। এটা আসলে শেষ কথা না। টিমটা ভালো করুক এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

দ্য ডেইলি স্টার: নিজের ঘরের মাটিতেই খেলা ছাড়ার ইচ্ছা আছে?

মাশরাফি: অবশ্যই সেটা ইচ্ছা আছে। কিন্তু একটু আগেও যেটা বললাম, যেটা চাইছি সেটাই যে হবে তার নিশ্চয়তা নেই। তবে যদি সুস্থ থাকি, ফর্ম থাকে, অবশ্যই ইচ্ছা আছে। তবে এর জন্য পরিবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেভাবে টি-টোয়েন্টি থেকে আচমকা সরে গেছি সেভাবে সরতে চাই না। আমারও ব্যক্তিগত জীবনে সবকিছু আচমকা করার অভ্যাস। সেটা যদি না করি সবাইকে ঠিকমত জানিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।

Click here to read the English version of this interview

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago