সব অবক্ষয় ঠেলে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে

চলছে অমর একুশে বইমেলা। প্রতিদিন মেলায় আসছে নতুন বই। এর মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে এম আব্দুল আলীমের 'রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস'। বইমেলা ও নিজের গবেষণা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: 'রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস' আপনার অনেক বড় গবেষণা। এই কাজের পরিকল্পনা কতদিনের ছিল এবং গবেষণা পদ্ধতিটা কী?

এম আব্দুল আলীম : হ্যাঁ, এটা আমার জীবনের সত্যিই বড় কাজ। বলতে দ্বিধা নেই যে, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন নিয়ে এমন কাজ এর আগে খুব বেশি হয়নি। বিশেষ করে আহমদ রফিক, আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, তসিকুল ইসলাম রাজা, মামুন সিদ্দিকী, মোজাম্মেল বিশ্বাসসহ কয়েকজনের একেকটি জেলার ভাষা-আন্দোলন নিয়ে স্বতন্ত্র কয়েকটি গ্রন্থ রচিত হলেও সকল জেলার ভাষা-আন্দোলন নিয়ে বিস্তৃত পরিসরের কাজ এটিই প্রথম। রয়েল সাইজের বইটির পৃষ্ঠাসংখ্যা ১২০০, প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। 

এ গ্রন্থের পরিকল্পনা করেছিলাম ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১২ সালে পাবনা জেলার ভাষা-আন্দোলন নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেছিলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশের একটি সংকলনের জন্য। পরে সেটি বিস্তৃত করে 'পাবনায় ভাষা-আন্দোলন' নামে গ্রন্থ-রচনা করি। এরপর রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের জেলাভিত্তিক ইতিহাস অনুসন্ধান আমাকে পেয়ে বসে। গত প্রায় ১০ বছরের পরিশ্রম ও সাধনায় গ্রন্থটি রচনা করি। এতে ফিল্ডওয়ার্ক পদ্ধতি যেমন প্রয়োগ করা হয়েছে, তেমনি ঐতিহাসিক পদ্ধতিসহ গবেষণার নানা রীতি অনুসরণ করেছি। 

দ্য ডেইলি স্টার: আমাদের ইতিহাসচর্চা, গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক ফাঁকি থাকে। তার মধ্যে তথ্যসূত্র  বা সঠিক রেফারেন্স না দেওয়া। এই ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে কাজটি করেছেন।

এম আব্দুল আলীম : প্রথমত আমি রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের সময়কার পত্র-পত্রিকার তথ্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন ভাষাসংগ্রামীর স্মৃতিচারণা, প্রতিবেদন, বিভিন্ন সংগঠনের লিফলেট, ছবি, ডায়েরি, চিঠি-পত্র, স্থানীয় ইতিহাস ও ভাষা-আন্দোলন সম্পর্কিত গ্রন্থের পাশাপাশি রেখে সঠিক তথ্যটি ব্যবহার করেছি। তথ্যগুলো তুলনামূলক পর্যালোচনা করে তারপর গ্রন্থভুক্ত করেছি। 
   
দ্য ডেইলি স্টার: এখনকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গবেষণায় দেখা যায় না। অথচ তাদেরই তো গবেষণা করার কথা। এই নিয়ে আপনার মতামত কী

এম আব্দুল আলীম : অবক্ষয়ের অন্ধকার আছে, আলোও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক নীরবে-নিভৃতে গবেষণা করছেন। তাদের খবর আমরা তেমন রাখিনা। আমি খুব যে কাজ করছি তা নয়, তবে লেগে থাকার একটা প্রবণতা আছে। আমি মনে করি, গবেষণা এবং পঠন-পাঠনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রধান কাজ । এ বোধ থেকেই আমি গবেষণায় মগ্ন থাকার চেষ্টা করি। কাজ কতটুকু কী হচ্ছে, তা পাঠক এবং সমালোচকগণ নিরূপণ করবেন। 
 
দ্য ডেইলি স্টার:  তরুণদের মধ্যে গবেষণায়  কতটা আগ্রহ দেখতে পান? বাংলাদেশে গবেষণার ভবিষ্যত কেমন?

এম আব্দুল আলীম : প্রবীণদের মতো তরুণদেরও বৃহৎ অংশ বৈষয়িক। তারা অল্পতে সবকিছু হাতের মুঠোয় পেতে চায়। তাদের গবেষণার সময় কোথায়? তাছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি এবং পুঁজিবাদী বিশ্বে তাদের হাতছানি দিচ্ছে অর্থ-বিত্ত এবং ভোগ-বিলাসিতার উপকরণ। এর মধ্যেও বহু তরুণ গবেষণায় এসেছে। আমি মনে করি, বৈষয়িকতার এবং পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী প্রভাবের মধ্যেও তরুণদের বড় একটা অংশ গবেষণায় আসবে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে কাজ করবে। আমি আশাবাদী মানুষ, তাই মনে করি সব অবক্ষয় ঠেলে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। সকলে আসবে এটা মনে করি না। আগাছার তুলনায় বটগাছ অল্পই থাকে এবং আগাছার উপর দিয়ে যুগের পর যুগ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে বটগাছ।

দ্য ডেইলি স্টার: একাত্তরের তুলনায় সাতচল্লিশ, বায়ান্ন নিয়ে আমাদের গবেষণা কম। কারণ কী?

এম আব্দুল আলীম : রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ৭০ বছর অতিক্রান্ত হলো এবার, মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর। আমরা এমনিতেই বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি। আমরা বর্তমান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চাই। তাই অতীত নিয়ে কিছুটা ভাবলেও দূর অতীত নিয়ে ভাবার সময় পাই না। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এখানো বেঁচে থাকলেও ভাষাসংগ্রামীরা বেশিরভাগই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাছাড়া তথ্যের অপ্রতুলতা এবং অনুসন্ধানস্পৃহার অভাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতটুকু আগ্রহ আছে, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন নিয়ে ততটা আগ্রহ নেই। এর মধ্যেও যে একেবারে কাজ হচ্ছে না, তা নয়। অনেকেই বিচ্ছিন্ন এবং বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতার অভাবও ভাষা-আন্দোলন নিয়ে কাজ না হওয়ার বড় একটা কারণ।

বাংলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট দায়িত্ব নিলে এখনও রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন নিয়ে বহু কাজ করা সম্ভব। বিশেষ করে, ভাষা-আন্দোলনের দলিলপত্র সংকলন, ভাষাসংগ্রামীদের অবদান নিরূপণ, ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অবদান, জেলাভিত্তিক ইতিহাস প্রভৃতি নিয়ে আরও গবেষণা করা সম্ভব।     

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

12h ago