সাতক্ষীরায় অ্যান্টেনাযুক্ত কচ্ছপ উদ্ধার

বিলের পানিতে মাছ ধরতে এসে শেখ ওহাব উদ্দিন পেয়ে যান একটি কচ্ছপ। বাজারে তা বিক্রি করতেও এনেছিলেন তিনি। তবে এর পিঠে অ্যান্টেনা থাকায় কেউ তা কিনতে রাজি হননি। অবশেষে, পুলিশের হাত হয়ে কচ্ছপটি আশ্রয় পায় বন বিভাগে।
আজ সকালে ঘটনাটি ঘটে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। পাখিমার বিলে মাছ ধরার সময় দোহার গ্রামের শেখ ওহাব উদ্দিন ১২ কেজি ওজনের এই কচ্ছপটি পেয়ে যান। পরে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন শ্রীমন্তকাটি নতুন বাজার মাছের আড়তে।
বাজারের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও কাইয়ুম শেখ জানান, “কচ্ছপের পিঠে অ্যান্টেনা জাতীয় যন্ত্রাংশ দেখে কেউ তা কিনতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের পরামর্শে তিনি কচ্ছপটি বাড়ি নিয়ে যান। এ সময় অনেক মানুষ তাঁর কচ্ছপটি দেখতে ভীড় করেন।”
খবর পেয়ে তালা উপজেলার খেশরা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মাজেদ হাওলাদার কচ্ছপটি উদ্ধার করে তালা থানায় পাঠিয়ে দেন।
কচ্ছপটির পিঠের উপর অ্যান্টেনার মত একটি সংযুক্ত যন্ত্রে লেখা রয়েছে আইডি-১৬৫৩৩৭-চ ০২৭৯১, প্রোজেক্ট-বাটাগুরবাসকা, ভিয়েনা-জু, বাংলাদেশ-২০১৬, স্যারট্র্যাক (ID-165337-Cha02792, PROJECT- BATAGURBASKA, VIENNA-ZOO, BANGLADESH-2016, SIRTRACK)।
শেখ ওহাব উদ্দিন জানান, “সকাল ৮টার দিকে পাখিমার বিলের জোয়ারাধারা এলাকায় সড়কের পাশে তিনি সকালে কচ্ছপ দেখতে পেয়ে তা ধরে বাড়ি নিয়ে যান। পরে বিক্রির জন্য এলাকার নতুন বাজার মাছের আড়তে নিয়ে গেলে স্থানীয়রা তাঁকে বলেন এটি কোনো পর্যাবেক্ষণ সংক্রান্ত কচ্ছপ। তিনি তা বিক্রি না করে বাড়ি নিয়ে আসলে পুলিশ এসে নিয়ে যায়।”
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম জানান, আমেরিকার টারটেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রে কুমির ও হরিণের পাশাপাশি কচ্ছপ প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে মূলত বিপন্ন বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ নিয়ে গবেষণা চলছে।
এর অংশ হিসেবে বাটাগুর বাসকার স্বভাব, খাদ্যাভ্যাস, বিচরণক্ষেত্র, জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে এ কচ্ছপ দুটির পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সিস্টেম স্থাপন করে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
একটি কচ্ছপ কোনো সিগনাল পাঠাচ্ছে না। তবে অন্যটি সাগর ও সুন্দরবন ঘুরে ছবি পাঠাচ্ছে। এর ফলে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে কচ্ছপের জীবনযাপন সম্পর্কে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে।
এ প্রজাতির প্রাপ্তবয়স্ক কচ্ছপের ওজন হয় ২৫-৩০ কেজি। তারা বাঁচে ৭০-৮০ বছর।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসান হাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনি বন বিভাগের ওয়ার্ড লাইফ প্রকল্পের বনপ্রাণী ব্যবস্থাপন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ খুলনার বিভাগের রেঞ্জের লৎফর রহমান ও বন্যপ্রানী ও জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজেদুল হাসানের কাছে দুপুর ২টার দিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বন বিভাগের ওয়ার্ড লাইফ প্রকল্পের বনপ্রাণী ব্যবস্থাপন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ খুলনার বিভাগের রেঞ্জের লৎফর রহমান জানান, “কচ্ছপটি সুস্থ রয়েছে। সুন্দরবনের করমজলে বনবিভাগের নির্দিষ্ট স্থানে এখন এটি রাখা হবে। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞারা এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আবার সুন্দরবনের নদীতে ছাড়া হবে।
Comments