সীমান্ত থেকে মাইন সরাতে একমত বিজিবি-মিয়ানমার পুলিশ
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত থেকে মাইন সরাতে একমত হয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স (এমপিএফ)-এর চীফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ।
গত ১ এপ্রিল ঢাকায় শুরু হওয়া ছয় দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে আজ এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
এতে আরও বলা হয়, সীমান্তে শূন্য লাইনের আশেপাশে পুঁতে রাখা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ও মাইনের বিস্ফোরণে আহত ও নিহতের ঘটনা পরিহার করা এবং সীমান্তে টহল পরিচালনাসহ সুষ্ঠু সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করার স্বার্থে সেগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সম্মেলনে দুটি দেশ উন্নততর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, আস্থা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সীমান্তে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার নাফ রিভার এগ্রিমেন্ট- ১৯৬৬, বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার এগ্রিমেন্ট- ১৯৮০ এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার ল্যান্ড বাউন্ডারি ট্রিটি- ১৯৯৮ যথাযথ অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।
এছাড়াও, বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক বাংলাদেশে মিয়ানমার নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বিশেষ করে গত অক্টোবর ২০১৬ থেকে অস্বাভাবিক হারে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মিয়ানমারের চীফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ জানান, বর্তমানে মায়ানমারের মংডুতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে এ ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে পরস্পরকে সহযোগিতা প্রদানে সম্মত হয়েছে।
বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক সীমান্ত লঙ্ঘন, সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীসহ বাংলাদেশী নাগরিক এবং জেলেদের উপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সীমান্ত এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে এমন কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য তিনি মিয়ানমার পক্ষকে অনুরোধ জানান।
জবাবে চীফ অব পুলিশ জেনারেল স্টাফ সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এধরণের গুলিবর্ষণ এবং অনাকাক্ষিত সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা বন্ধের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে তিনি সীমান্তে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উভয় পক্ষ সম্মত হন যে, দেশ দুটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সীমান্তের বিধি-বিধান লঙ্ঘন করবে না এবং পূর্বানুমোদন ছাড়া সীমান্ত অতিক্রম করবেন না।
অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারী কোন নাগরিকের কাছে অবৈধ দ্রব্য পাওয়া না গেলে তাঁর কাছে থাকা জিনিসপত্রসহ তাঁকে দ্রুত অপর পক্ষের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
অনিচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে একে অপরের দেশে আটক থাকা নাগরিকদের প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য তাঁদের সঙ্গে নিজ নিজ দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধির (Consular) সাক্ষাতের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও তারা তুলে ধরেন।
উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদলের প্রধানদ্বয় নিজ নিজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করতেও সম্মত হয়েছেন।
পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হিসেবে প্রীতিম্যাচ ও খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ বিনিময়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুল শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ, পরিবার কল্যাণ সমিতির সদস্যদের ভ্রমণ বিনিময় ইত্যাদি আয়োজনের বিষয়ে উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আনিছুর রহমান এর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং পুলিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মেয়ো সেও উইন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের মায়ানমার প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশ নেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে আরও অংশ নেন বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কোস্ট গার্ড, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভে জেনারেল অব বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
অপরদিকে, মিয়ানমার প্রতিনিধিদলে অংশ নেন মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধি।
Comments