স্ত্রী তৃষাকে আত্মঘাতী হামলা চালাতে বলেছিল মুসা
রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত তিনতলা বাড়িটি শনিবার পুলিশ ঘিরে ফেলার পর স্ত্রী তৃষা মনিকে সুইসাইড ভেস্ট পরে চার বছরের মেয়েকে নিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালাতে বলেছিল মায়নুল মুসা।
তবে বাচ্চার প্রতি ভালোবাসা তাকে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটানো থেকে বিরত রাখে। জঙ্গি স্বামীর নির্দেশ অমান্য করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তৃষা।
জিজ্ঞাসাবাদে তৃষা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একজন কর্মকর্তাকে এই কথা বলেছেন।
পুলিশ ঘিরে ফেলেছে বুঝতে পেরে একটি এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ দিয়ে তৃষা তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে করণীয় সম্পর্কে জানতে চায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, “মুসা বাসায় থাকা সব নারীদের সুইসাইড ভেস্ট পরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানোর পরামর্শ দেন।”
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ১ জুলাই গুলশানের ক্যাফেতে হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার পর সংগঠনের হাল ধরেন মুসা। জঙ্গি সংগঠনটির অন্যান্য শীর্ষ নেতারা হয় গ্রেফতার অথবা নজরদারির মধ্যে রয়েছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আশকোনায় তিনতলা বাড়িটির নিচতলায় গিয়ে বোমা ও গ্রেনেড রেখে আসেন মুসা। ওই আস্তানায় ফিরোজ ও সেলিম নামের আরও দুজনের যাতায়াত ছিলো। পুলিশের একটি সূত্র জানায় শনিবার আশকোনায় অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ আগে এক জঙ্গি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার বয়স ১৮ বছরের আশপাশে।
জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা জানান, নব্য জেএমবিতে এখনও একজন বোমা তৈরির বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। অন্যান্য বোমা বিশেষজ্ঞরা হয় নিহত অথবা কারাগারে রয়েছেন।
আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলাকালে মেজর (অবঃ) জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা তার দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে একটি ৯এমএম পিস্তল ও ছয়টি গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন।
সিটিটিসি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া নিয়ে তৃষার ভেতর অনুশোচনা থাকলেও শিলার মধ্যে এধরনের কোনও অনুভূতি নেই।
অভিযান চলাকালে যে নারী জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান তার নাম শাকিরা। চার বছরের মেয়ে সাবিনাকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে পুলিশের কাছে যাওয়ার আগেই সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটান শাকিরা।
বিস্ফোরণে শাকিরার দেহের একটি অংশ মারাত্মকভাবে জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে শিশু সাবিনা ও অপর একজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন।
গতকাল সন্ধ্যায় সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম আশকোনায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্য ও যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে শাকিরা তার মেয়েকে নিয়ে অন্য যে কোথাও আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারতেন।”
শাকিরা প্রথমে ইকবালকে বিয়ে করেন। ওই সংসারে সাবিনার জন্ম হয়। ইকবাল ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর তিনি সুমন নামের একজনকে বিয়ে করেন। পুলিশের সন্দেহ সুমনও জঙ্গিদলের সদস্য। গত একমাস থেকে তার খোঁজ নেই বলেও জানান মনিরুল।
ঢাকার দক্ষিণখানের পূর্বপাড়া আশকোনায় সূর্য ভিলা নামের তিনতলা বাড়িটিতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে সন্দেহে সিটিটিসি ইউনিটের একটি দল শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে অভিযান শুরু করে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য বাড়িটি ঘিরে রেখে ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করেন। এতে দুই শিশুকে নিয়ে দুই জন নারী আত্মসমর্পণ করলেও আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এক নারীসহ নিহত হন দুই জন।
Comments