হার না মানা প্রতিবন্ধী

তিন চাকার এই বাহনে চড়েই ভেষজ ওষুধ বিক্রি করতে যান বগুড়ার গাবতলি উপজেলার সৈয়দ আলী। ছবি: স্টার

জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী বগুড়ার গাবতলি উপজেলার বটিয়াভাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ আলী (৩২)। হাঁটুর নিচ থেকে পা অসার হওয়ায় কোনদিন দাঁড়াতে না পারলেও শুধুমাত্র দুই হাতের জোরে আজ তিনি স্বাবলম্বী। প্রতিবন্ধী তো বটেই এই ভেষজ ওষুধ বিক্রেতা এখন সবার কাছেই অনুপ্রেরণা।

অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধীরা স্বজনদের অবহেলার পাত্র হলেও পাঁচ ভাইবোনের পরিবারে বড় হওয়া সৈয়দ আলীর স্বাবলম্বী হওয়ার পেছনে রয়েছে তার পরিবারেরই অবদান। এ জন্য তিনি পুরো কৃতিত্ব দিতে চান তাঁর মা ও শিক্ষকদের। তার ভাষায়, “শুধুমাত্র আমার মায়ের সাহায্য ও দুর্গাহাটা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের দয়ার কারণেই আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করতে পেরেছি।” আর গ্রামেও বেশ সুখ্যাতি রয়েছে তার।

আলীর স্কুলের বন্ধু মতিউর রহমান বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। শৈশবের কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ওকে স্কুলের বেঞ্চে বসতে সহায়তা করতাম। অনেক সময় স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসার কাজও করতাম আমরা। আলীর মানসিক শক্তি আমাদের মুগ্ধ করতো। সে আমাদের অনুপ্রেরণা।”

কিন্তু নিজ থেকে চলাফেরায় অক্ষম হওয়ায় আলীর জন্য পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিলো না। আলীর বাবার সহায়তা নিয়ে মা আসমা আক্তার এই কঠিন কাজটি চালিয়ে গেছেন। বেশ কিছুদিন আগে বিধবা হওয়া আসমা গর্বের সাথে বলেন, “আলী বড় হতে থাকায় তার দেখাশোনা ও পড়ালেখার ব্যবস্থা করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছিল।” কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দেখেন আর চার ছেলেমেয়ের চেয়ে আলী পড়ালেখায় বেশি মনযোগী।

মা আসমা বেগমের আলীকে নিয়ে গর্ব করার আরও কারণ ছিলো। তার অন্য ছেলেরা যখন নিজের পায়ে দাঁড়ায়, একে একে তারা মাকে ছেড়ে নিজেদের মত থাকতে শুরু করেন। এমনকি পরিবারের আর্থিক দায়িত্ব নিতেও তারা অস্বীকার করেন। কিন্তু আলী প্রতিবন্ধী হলেও আত্মমর্যাদায় কোন কমতি ছিলো না। অন্যের মুখাপেক্ষী না থাকার শপথ নেন তিনি।

বছর তিনেক আগে স্ত্রী রেশমা বেগম ও দুই বছরের মেয়ে রাছিয়াকে বাড়ি ছেড়ে বগুড়া বাস স্ট্যান্ডের পাশের বস্তিতে থাকা শুরু করেন। স্থানীয় এক মেকানিক তার জন্য হাতের শক্তিতে চলা তিন চাকার একটি বাহন তৈরি করে দেন। এতে চড়েই ভেষজ ওষুধ ও মলম বিক্রির মাধ্যমে রোজগার শুরু করেন আলী।

তিনি জানান, “ওষুধ বিক্রি করে দৈনিক ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় আমার। এই টাকা দিয়ে নিজের পরিবারের পাশাপাশি মায়ের খরচ চলে।”

শুধুমাত্র নিজের মানসিক শক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার চেষ্টা মুগ্ধ করেছে সেখানকার স্থানীয়দের। কলেজ শিক্ষক আক্তার হোসেনের কণ্ঠেও শোনা গেল ওই প্রশংসার সুর। তিনি বলেন, “অনেক মানুষই তাদের বাবা-মায়ের দেখাশোনা করে না। কিন্তু সৈয়দ আলী এরকম না। এদিক থেকে সে অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা।”

সবজি বিক্রেতা গণেশ দাশের মুখেও আলীর জন্য সেই একই প্রশংসা। “সে হয়ত শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, কিন্তু মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তার মুখের হাসি যে কোন বাধার চেয়ে শক্তিশালী।”

ভবিষ্যতে বগুড়া শহরে একটি দোকান নিয়ে ভেষজ ওষুধ বিক্রির কাজ এগিয়ে নিতে চান আলী। স্ত্রী রেশমা মনে করেন, শুধু মাত্র হাতদুটো কর্মক্ষম থাকায় তাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। স্থানীয় দোকান দিতে পারলে তার এই দুর্দশার অবসান হবে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

3h ago