ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে অর্থায়ন করছে উ. কোরিয়া: জাতিসংঘ
উত্তর কোরিয়া সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে চুরি করা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ক্রিপ্টোকারেন্সি (ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা) তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের অর্থায়নে ব্যয় করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার সাইবার আক্রমণকারীরা ৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি (প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা) ডিজিটাল সম্পদ চুরি করেছেন।
তারা জানান, এ ধরনের আক্রমণ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের জন্য 'গুরুত্বপূর্ণ রাজস্বের উৎস'।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার কমপক্ষে ৩টি ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনকে লক্ষ্য করে সাইবার আক্রমণ চালানো হয়েছিল।
প্রতিবেদনে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান চেইনালিসিসের একটি গবেষণার সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, উত্তর কোরিয়া সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে গত বছর ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে।
২০১৯ সালে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, উত্তর কোরিয়া খুবই জটিল প্রকৃতির সাইবার আক্রমণ চালিয়ে তাদের গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ২ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরেও উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামোর উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারা একইসঙ্গে দেশের বাইরে থেকে উপকরণ, প্রযুক্তি ও জ্ঞান আহরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে সাইবার কার্যক্রম ও যৌথ বৈজ্ঞানিক গবেষণাও অন্তর্ভুক্ত আছে।
জাতিসংঘের বিধিনিষেধ নিরীক্ষণকারীরা জানান, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিমাণ 'উল্লেখযোগ্য' পরিমাণে বেড়েছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে, গত ১ মাসেই উত্তর কোরিয়া ৯ বার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে।
বিধিনিষেধ নিরীক্ষণকারীরা জানান, উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বিশেষ করে, নিক্ষেপের প্রস্তুতিকালীন সময় কমানো, সমুদ্রসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নিক্ষেপের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও উন্নততর সহনশীলতার জায়গাগুলোতে এই উন্নতি দেখা গেছে।
গত শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প বিস্তারের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে চীন ও রাশিয়া স্বাক্ষর করতে রাজি হয়নি।
গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, উত্তর কোরিয়ায় তাদের বিশেষ প্রতিনিধি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসবেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে দেশটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধের কারণে কতটুকু ভুগছে, তা ঠিক বোঝা যায় না।
Comments