আফিম চাষ বন্ধ হবে তালেবান শাসনে?

২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল আফগানিস্তানের জালালাবাদ প্রদেশে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে আফগান পুলিশ। ছবি: রয়টার্স।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম উৎপাদন হয় আফগানিস্তানে। জাতিসংঘের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে সারাবিশ্বে উৎপাদিত মোট আফিমের  প্রায় ৮৫ শতাংশই আফগানিস্তানে উৎপাদিত হয়েছে। পপি গাছ তথা আফিম চাষ দীর্ঘদিন ধরে আফগান জনগোষ্ঠীর আয়ের একটি বড় উৎস।

সিএনএন জানিয়েছে, সম্প্রতি ক্ষমতা দখলের পরপরই তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ 'বিশ্বকে পূর্ণ আশ্বাস' দিয়েছেন যে, তালেবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তান কোনো 'মাদক-রাষ্ট্র' হবে না। দেশটিতে মাদক চাষ বন্ধ করা হবে এবং আফিম চাষীদের জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে।

কিন্তু, তালেবান কীভাবে এটি করবে বা আদৌ করবে কি না তা অনিশ্চিত।

সিএনএনর প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তানের জিডিপির ১১ শতাংশ আফিম থেকে আসে। তালেবানও এখান থেকে লভ্যাংশ পায়। কিন্তু কতটা পায়, তা স্পষ্ট নয়।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো ভান্ডা ফেলবাব-ব্রাউন সিএনএনকে বলেন, 'স্পষ্টতই মাদক তালেবানদের অন্যতম একটি আয়ের উৎস।'

তিনি জানান, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত যেসব এলাকায় তাদের প্রভাব বেশি, সেসব এলাকা থেকে এ বাবদ অনানুষ্ঠানিক কর আদায় করে থাকে। তালেবানের আয়ের ব্যাপারটিও এভাবেই ঘটে। আফিম অর্থনীতি থেকে তাদের আয়ের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে, তা কয়েকশো মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে।  

তালেবানের আয়ের পাশাপাশি এখানে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের কিছু বিষয়ও আছে।

২০০০ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে তালেবান আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আফিম চাষকে 'অনৈসলামিক' আখ্যা দিয়ে তৎকালীন তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর বলেন, কেউ পপি বীজ রোপণ করলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও তহবিল পাওযার কৌশল হিসেবে তালেবান এ উদ্যোগ নিয়েছিল।

তবে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন ৯০ শতাংশ কমে যায় এবং এক বছরে তা একরকম নেই হয়ে যায়। ফলে বিশ্বের আফিম সরবরাহ ৬৫ শতাংশ কমে যায়। আফগানিস্তানে বড় ধরনের কর্মসংস্থান সংকট তৈরি হয়।

এবারও নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে একই ধরনের ঘটনা ঘটার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সহিংসতাও তৈরি হতে পারে আফগানিস্তানে।  

ফলে ঘোষণা দিলেও, তালেবান আবারও ২০০০ সালের মতো আফিমের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এমন সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ আফগানিস্তানে এখন কর্মসংস্থানের সংকট রয়েছে। পপি চাষের মাধ্যমে অনেকেই ভাগ্য পাল্টানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ফলে আফগানিস্তানে আফিম চাষ বন্ধের ঘোষণাকে মূলত তালেবানের পশ্চিমাদের সুনজরে আসার কৌশলগত প্রচেষ্টা  মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  

Comments

The Daily Star  | English

Gridline woes delay Rooppur Power Plant launch

The issue was highlighted during an International Atomic Energy Agency (IAEA) inspection in March

7h ago