শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে। ছবি: দ্য ডেইলি মিরর শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুনাবর্ধনে। ছবি: দ্য ডেইলি মিরর শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার বিতর্কিত রাজাপাকসে পরিবারের মিত্র হিসেবে পরিচিত দীনেশ গুনাবর্ধনে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন। আজ শুক্রবার দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ বল প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর তিনি শপথ নেন।

আজ বার্তা সংস্থা  এপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

চরম অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে থাকা দ্বীপরাষ্ট্রটিতে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে মালদ্বীপে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তিনি সিংগাপুরে পৌঁছান। ইমেইলের মাধ্যমে পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান তিনি।

গত সপ্তাহে পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট  হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি গোতাবায়ার মেয়াদের অবশিষ্ট ২ বছর এ পদে থাকবেন। 

নির্বাচিত হওয়ার পর রণিল তার উত্তরসূরি ও নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করলেন তারই স্কুলের সহপাঠী ৭৩ বছর বয়সী দীনেশ গুনাবর্ধনেকে।

১৯৮৩ সাল থেকে বামপন্থী মহাজনা একসাথ পেরামুনা (এমইপি) দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দীনেশ। ২০০০ সাল থেকে তিনি পার্লামেন্টের সদস্য। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি পরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

বেশ কয়েক মাস ধরে সুনিদৃষ্ট কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা শুক্রবারের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও গতকাল রাত থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়। তাদেরকে সরানোর ক্ষেত্রে বল প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্যরা।

একজন আইনজীবী অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে বাধ্য হয়েছেন। কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আজ ভোরের আগেই প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছাকাছি অবস্থিত বিক্ষোভকারীদের শিবির খালি করে দেয় পুলিশ। এখানেই বিক্ষোভকারীরা গত ১০৪ দিন ধরে অবস্থান নিয়েছিলেন। ট্রাক ও বাসে করে রাত ১২টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে আসতে শুরু করেন। তারা তাঁবুগুলো সরিয়ে ফেলেন এবং সেখানে পৌঁছানোর সব রাস্তা বন্ধ করে দেন।

বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার পর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের বাইরে পাহারা দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ছবি: এপি
বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার পর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের বাইরে পাহারা দিচ্ছে সেনাবাহিনী। ছবি: এপি

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অন্তত ২ সাংবাদিককে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মারধর করেছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ২ আইনজীবীকেও মারধর করার অভিযোগ এনেছে শ্রীলঙ্কার আইনজীবীদের মূল সংস্থা, 'বার অ্যাসোসিয়েশন অব শ্রীলঙ্কা।'

দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও নতুন সরকারপ্রধান শপথ নেওয়ার পরেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেলআউট চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিভা জাপানের সংবাদ মাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে এ সপ্তাহে জানান, 'আইএমএফ চায় যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি চূড়ান্ত হোক।'

তবে প্রেসিডেন্ট রনিল এ মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিলেন, চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি ঝামেলাপূর্ণ হয়ে গেছে, কারণ শ্রীলঙ্কা এখন দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।

Comments