১০ মাসে ১৯৭ নারী স্বামীর হাতে খুন: আসক

চলতি বছর ১০ মাসে ১৯৭ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন এবং পারিবারিক সহিংসতার জেরে ১২৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।

চলতি বছর ১০ মাসে ১৯৭ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন এবং পারিবারিক সহিংসতার জেরে ১২৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আসক জানায়, বাংলাদেশে নারী অধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে নারীরা এখনো প্রতিনিয়ত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নানা ধরনের বৈষম্য, নিপীড়ন এবং শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার।

আসকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে ১ হাজার ১৭৮ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে ২২০ জনকে এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৩ জন নারীকে।

আসক আরও জানায়, গত ১০ মাসে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২৭৬টি এবং আত্মহত্যা করেছেন ৮ জন নারী।

এই মাসগুলোতে ১১৬ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন।

যৌতুককে কেন্দ্র করে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ১০১ জনকে এবং নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। এসিড নিক্ষেপ হয়েছে ২০ জন নারীর ওপর।

বিজ্ঞপ্তিতে আসক জানায়, সহিংসতার এমন চিত্রের বিপরীতে খুব কম সংখ্যক ঘটনার ক্ষেত্রে মামলা হচ্ছে, বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং ন্যায়বিচার পাওয়া গেছে।

'নারীর প্রতি সহিংসতার এমন চিত্রের মূল কারণ হিসেবে বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা' উল্লেখ করে আসক আরও জানায়, দেশের নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটলেও এই মানসিকতা বাংলাদেশের সমাজে এখনো ভয়ানক মাত্রায় রয়ে গেছে।

এছাড়াও, বিদ্যমান আইন ও বিচারিক কাঠামো এখনও নারীবান্ধব নয় এবং নারীর জন্য সহজগম্য নয়। এসব কাঠামো নারীর অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ায় নারীরা আইনের আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা পায়, নিরুৎসাহিত হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে এবং ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে আসক বেশ কিছু দাবি উপস্থাপন করেছে।

দাবিগুলোর মধ্যে আছে-'ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন' প্রনয়ন করা, নির্যাতন সংক্রান্ত সরকারি পরিষেবাগুলো সবার জন্য সমানভাবে সহজলভ্য করা এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারসহ অন্যান্য সুবিধাগুলোর সংখ্যা বাড়ানো এবং সব এলাকায় যথাযথ কার্যকরী পুলিশ সহায়তার ব্যবস্থা রাখা।

সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ও ১৪৬(৩) ধারা বাতিল এবং নির্যাতনের মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া আইনে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বলেও দাবি জানায় আসক।

অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে-২০০৭ সালে আইন কমিশন প্রস্তাবিত 'ক্রাইম ভিকটিম কম্পেনসেশন অ্যাক্ট' আইনে পরিণত করা, নারীর অধিকার সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করে তোলা এবং শিক্ষা কারিকুলামে সমমর্যাদা, সমানাধিকার, বৈষম্যহীতা, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা।

এছাড়া, আইন ও বিচারিক কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জেন্ডার সংবেদনশীল করে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, সম্পত্তিতে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তন আনা এবং বৈবাহিক জীবনে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকারের বিধান আইনে সংযুক্ত করা, ধর্ষণের ঘটনায় উচ্চ আদালতের ১৮ দফা নির্দেশনা সুষ্পষ্টভাবে মেনে চলা এবং ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া, এই ১৮ দফা নির্দেশনার ব্যাপক প্রচার এবং নারীর চলাচলের স্বাধীনতা এবং নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা (অনলাইন ও অফলাইন উভয়ক্ষেত্রে) নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় আসক।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago