অনলাইনে দেশের প্রথম বোমা ডেটা সেন্টার

কাজ শুরুর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে দেশের প্রথম 'বোমা ডেটা সেন্টার'। শুধু ছবি বিশ্লেষণ করেই মুহূর্তের মধ্যে বোমা সদৃশ বস্তুর বিবরণ দিতে পারবে এটি।

সেন্টারে ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শুধু বিস্ফোরক বস্তুকে শনাক্ত করতেই সাহায্য করবেন না, কীভাবে এটির নিরাপদ বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে, সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রীয়করণ ইউনিট (বিডিইউ) ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ডেটা সেন্টারটি স্থাপন করেছে। গতকাল বুধবার থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে এটি।

সেন্টারের ভেতর ২০০০ সালের পর থেকে জঙ্গি সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও শিল্প বিস্ফোরণে ব্যবহৃত সব ধরণের বিস্ফোরক ও ইমপ্রুভাইজড এক্সপ্লোসিভস ডিভাইসের (আইইডি) একটি আর্কাইভ রয়েছে। আর্কাইভটিতে প্রায় ৬১টি স্লট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ স্লটগুলোতে বার কোডসহ এখন পর্যন্ত পাওয়া সব আইইডির রেপ্লিকা সংরক্ষণ করেছেন।

তারা জানান, শুধু বার কোড স্ক্যান করলেই বোমা বা আইইডি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য মনিটরে দেখা যাবে। বিস্ফোরকটি কোন অপরাধী গোষ্ঠী ব্যবহার করেছে, আইইডির ধরন, ভেতরে ব্যবহৃত উপাদান, উৎস এবং এ পর্যন্ত এ কারণে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে— সেসবের বিবরণও মনিটরে ভেসে উঠবে।

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ডেটা সেন্টারটি বিস্ফোরক সংক্রান্ত মামলার তদন্ত ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে। কারণ, এতে সব ধরনের আইইডির ইতিহাস এবং আগে কারা এ আইইডি ব্যবহার করেছে, সেই তথ্য থাকবে। 

তিনি বলেন, 'সেন্টারটি একটি উন্নত দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। বিশ্বের কোথাও নতুন আইইডি পাওয়া গেলে ওই ব্যাপারে তথ্য নেবে।'

কোনো আইইডি পাওয়া গেলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে যায় উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, 'আমরা আগেও দেখেছি, ভুল ব্যবস্থা নেওয়ায় এবং সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ প্রায়ই আহত হয়। ডেটা সেন্টার সচেতনতা তৈরিতে সাহায্য করবে। মানুষ এ বিষয়ে জানতে পারবে এবং স্থানীয় পুলিশকে খবর দেবে।' 

গতকাল ডেটা সেন্টারটি পরিদর্শনের সময়, এতে পাঁচটি আলাদা বিভাগ দেখা গেছে।

এসব বিভাগের একটি হচ্ছে 'বম্ব আর্কাইভ'। সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি, হলি আর্টিজান ক্যাফে, তাজিয়া মিছিল ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা এবং মৌলভীবাজার ও আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় ব্যবহৃত আইইডি এবং বোমার রেপ্লিকা রয়েছে।

দ্বিতীয় বিভাগটি হচ্ছে 'আইইডি রিসার্চ সেন্টার'। এ বিভাগে সাম্প্রতিক আইইডি বিষয়ক গবেষণা, বিশ্লেষণ ও বই রয়েছে। 

তৃতীয় বিভাগ হিসেবে আছে 'ডেটা ফিউসন কর্নার'। এখানে কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন এবং অন্যান্য পুলিশ ইউনিটকে মতামত, পরামর্শ ও ইনপুট দেবেন।

আইইডি কীভাবে ডিফিউজ করা যায়, বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করা যায় এবং আদালতে জমা দেওয়ার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা যায়, সে সম্পর্কে তথ্য রাখার জন্য 'টেকনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স' কর্নার রয়েছে।

এ ছাড়া, আইইডিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের জন্য 'কেমিক্যাল এক্সপ্লয়টেশন' কর্নার রয়েছে।

বিডিইউ ইউনিটের ইনচার্জ রহমত উল্লাহ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে পুলিশের একমাত্র প্রশিক্ষিত দল বিডিইউ। দলটিকে সারা দেশে বোমা সংক্রান্ত কলে সাড়া দিতে হয়। সেন্টার কর্মকর্তাদের নিরাপদে আইইডি বিস্ফোরিত করতে সাহায্য করতে পারবে। এটি ঝুঁকিও কমাবে।'

কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এফবিআই) একটি দল ইতোমধ্যে ডেটা সেন্টার পরিদর্শন করেছে এবং এর প্রশংসা করেছে।

বিডিইউ কর্মকর্তারা জানান, হুজি, জেএমবি এবং নব্য জেএমবি— মূলত এ তিনটি দেশীয় জঙ্গি সংগঠনকে আইইডি ও বোমা ব্যবহার করতে দেখা গেছে। জঙ্গি সংগঠনগুলো সবগুলো আইইডিই বিভিন্ন টিউটোরিয়াল ও ভিডিও দেখে তৈরি করেছিল। এসবের উপাদান স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করেছিল তারা। এ কারণে, ডেটা সেন্টার দেশের রাসায়নিক ব্যবসায়ী এবং তারা কোন ধরনের কেমিক্যাল বিক্রি করছেন, তার হালনাগাদ তথ্য রাখছে। 

সিটিটিসি ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ডেপুটি কমিশনার আবদুল মান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা এ বোমা ডেটা সেন্টারকে একটি ইনস্টিটিউটে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ইন্টেলিজেন্স ও ডেটাসেট শেয়ারের পরিকল্পনাও করেছি। এর ফলে বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাওয়া যাবে।'

 

অনুবাদ করেছেন জারীন তাসনিম

Comments

The Daily Star  | English

Gridline woes delay Rooppur Power Plant launch

The issue was highlighted during an International Atomic Energy Agency (IAEA) inspection in March

6h ago