জোবায়দা রহমান আইনের চোখে পলাতক: আপিল বিভাগ

জোবায়দা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক পর্যবেক্ষণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে আইনের চোখে পলাতক ঘোষণা করেছেন।

আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করেছেন, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ তার আবেদনটি গ্রহণ ও শুনানি করে এখতিয়ার অতিক্রম করেছেন। কারণ জোবায়দা রহমান দুর্নীতির মামলায় সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ না করে ওই আবেদন করেছিলেন।

আজ বুধবার প্রকাশিত ১৬ পৃষ্ঠার রায়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের বেঞ্চ মন্তব্য করেন, হাইকোর্ট ডিভিশনের রুল ইস্যুকারী বেঞ্চ তার এখতিয়ারকে অতিক্রম করে বিবেচনা করেননি যে, আবেদনকারী (জোবায়দা) যথাযথ এখতিয়ারের কাছে আত্মসমর্পণ না করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-এ ধারার অধীনে আবেদন (পিটিশন) করেন এবং একইভাবে ৫৬১-এ ধারার অধীনে অবৈধভাবে আবেদনটি গ্রহণ করেন ও মামলার পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করেন।

এর আগে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল শীর্ষ আদালতের ৪ সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের একটি রায় বহাল রাখেন, যেটি ২০১৭ সালে জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে নিম্ন আদালতের পথ পরিষ্কার করেছিল। একই দিনে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে জোবায়দা রহমানের করা আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের বেঞ্চ।

২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপনের অভিযোগে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

জোবায়দার দায়ের করা পিটিশনের পর হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং একটি রুল জারি করে দুদককে ব্যাখ্যা দিতে বলেন-কেন তার বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম বাতিল করা হবে না।

রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট পিটিশন খারিজ করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন এবং জোবায়দা রহমানকে দুর্নীতি মামলায় ৮ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেন।

কিন্তু, বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ না করে জোবায়দা রহমান হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে লিভ টু আপিল আবেদন করেন।

পূর্ণাঙ্গ পাঠ্য রায়ে আপিল বিভাগ ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া আদেশটি বাতিল করে দেন এই বলে যে, হাইকোর্টের আদেশটি আইনের আওতার বাইরে তাই বাতিল করা হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে, জোবায়দা রহমানের পক্ষে রায় প্রদানকারী হাইকোর্ট বেঞ্চ সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।

তবে, এই আইনজীবী হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারকদের নাম বলতে পারেননি, যারা জোবায়দা রহমানের আবেদন গ্রহণ করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন।

শীর্ষ আদালত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব নাগরিক আইনের সামনে সমান এবং সমান নিরাপত্তার অধিকারী। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা ভয় বা পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচারের শপথ নিয়েছেন। বিচার বিভাগকে অবশ্যই যে কোনো পরিস্থিতিতে, এমনকি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। বিচার বিভাগের এমন একটি নজির তৈরি করা উচিত নয়, যা সবার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। প্রত্যেক নাগরিকের আদালত থেকে ন্যায়বিচারে সমান অধিকার পাওয়ার অধিকার আছে। আদালতের সামনে উচ্চ বা নিম্ন বলে কিছু নেই। তাই আমরা মনে করি, আবেদনকারী যখন ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১-এ ধারার অধীনে আবেদন করেছিলেন, তখন তিনি আইনের চোখে পলাতক ছিলেন।

জোবায়দা রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তার মক্কেল দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন।

তবে, তিনি শীর্ষ আদালতের পূর্ণাঙ্গ পাঠ্য রায় এবং জোবাইদার লিভ টু আপিলের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ নিয়ে কিছু বলেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Jamuna Bridge tailback returns as Eid holidaymakers heading back

The traffic jam, which began around midnight, continued to spread and covered at least 20 kilometres on both sides of the bridge by this morning

1h ago