সাংবাদিক পলাশ হত্যা: দুই ভাইয়ের ১০ বছর করে কারাদণ্ড

সাংবাদিক শাহ মনির পলাশ (২৫) হত্যা মামলায় আসামি আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদ।
সাংবাদিক শাহ মনির পলাশ (২৫) হত্যা মামলায় আসামি আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদ। ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিক শাহ মনির পলাশ (২৫) হত্যা মামলায় আসামি আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দুই আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

তবে রায়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন মামলার বাদী পলাশের বাবা মনিরুল ইসলাম। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন। 

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, 'পারিবারিক বিরোধের জেরে লাঠির আঘাতে পলাশ মারা যান। এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ছিল না। এজন্য আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।'

দণ্ডপ্রাপ্ত ইউছুফ ও ছায়েদ সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মাছিমনগর গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে। 

জানতে চাইলে পলাশের বাবা মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলেটাকে ইউছুফ ও ছায়েদ হত্যা করেছে। কিন্তু আমি যোগ্য বিচার পাইনি। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আমি উচ্চ আদালতে যাবো। '

পলাশের ভাবি শিল্পি আক্তার বলেন, '৫ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু রায়ে আমদের মন ভেঙে গেছে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। জামিনে বের হয়ে আসামি ছায়েদ গত ৩ বছর ধরে আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।'

মামলার এজাহার ও পরিবার সূত্র জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পলাশদের বাগানের গাছ কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে তার দুই চাচাতো ভাই আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদ। এ নিয়ে ঝগড়ার শব্দ শুনে পলাশের ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বের হয়ে তিনি দেখতে পান যে তার বাবা মনিরকে চাচাতো ভাইরা মারধর করছে। একপর্যায়ে ইটের আঘাতে তার বাবা মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাটি দেখেই দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে মাটি থেকে তুলতে যান পলাশ। সেসময় পেছন থেকে রড দিয়ে পলাশের মাথায় আঘাত করেন দুই চাচাতো ভাই। তিনি অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরও তার বুকে রড ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন আসামিরা। আঘাতে পলাশের মাথার ভেতরে রক্ত জমাট বেধে যায়। 

ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য  ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি রক্ত বমি করলে তাকে নোয়াখালী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনা হলে পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে চিকিৎাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

একইদিন সন্ধ্যায় পলাশের বাবা বাদি হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় ৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আবদুল আলিম আদালতে ইউছুফ ও ছায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার আদালত এই রায় দেন। 

নিহত পলাশ সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মাছিমনগর গ্রামের কৃষক মনির হোসেনের ছেলে। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। তরুণ এই সাংবাদিক ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক রূপবাণী পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago