স্কুলশিক্ষার্থী অঙ্কন হত্যা মামলা: আসামি শনাক্ত হয়নি ২ মাসেও

মুন্সিগঞ্জ শহরের কাজী কমর উদ্দিন গভ. ইনস্টিটিউশন স্কুলের শিক্ষার্থী অঙ্কন দত্ত (১৭) হত্যাকাণ্ডের ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু, এখনো আসামিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এখন পর্যন্ত তদন্তেই আটকে আছে মামলার কার্যক্রম। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন হয়েছে একবার।
অঙ্কন দত্ত। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ শহরের কাজী কমর উদ্দিন গভ. ইনস্টিটিউশন স্কুলের শিক্ষার্থী অঙ্কন দত্ত (১৭) হত্যাকাণ্ডের ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু, এখনো আসামিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এখন পর্যন্ত তদন্তেই আটকে আছে মামলার কার্যক্রম। ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও পরিবর্তন হয়েছে একবার।

সর্বশেষ এ ঘটনায় পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার।

নিহত অঙ্কন দত্ত মুন্সিগঞ্জ শহরের রনছ পাড়ুলপাড়া এলাকার নির্মল দত্তের ছেলে। সে শহরের কাজী কমর উদ্দিন গভ. ইনস্টিটিউশন স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

মামলার বাদী অঙ্কনের চাচা প্রবীর দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'একটি কথাই বলতে চাইব তা হচ্ছে- বিচারহীনতার দেশে বিচার চেয়ে লাভ নেই। তদন্তকারীদের এই মামলা নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই অসহযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'অঙ্কনকে যখন প্রথম ছুরিকাঘাত হয়েছিল, তখন অভিযোগ জানাতে থানায় গেলে থানার ওসি অভিযোগ নেয়নি। তারপর আলামত হিসেবে রক্তমাখা শার্টও রাখেনি পুলিশ। যখন সহপাঠীরা আন্দোলন শুরু করল তখন পুলিশ তড়িঘড়ি করে মামলা গ্রহণ করে। তারপর বাড়িতে গিয়ে মামলার আলামত হিসেবে রক্তমাখা জামা সংগ্রহ করে। এরপর সদর থানার সাবেক ওসি বলল, পিবিআই ভালোভাবে তদন্ত করবে মামলাটি। মামলা হস্তান্তরের জন্য আমার থেকে স্বাক্ষর রাখলেন সাবেক ওসি। আমরা প্রভাবশালী কিংবা প্রভাবশালী বলয়ের মধ্যে থাকলে হয়ত পুলিশ এতদিনে আসামিকে খুঁজে বের করে ফেলত।'

নিহতের বাবা নির্মল দত্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ হয়ত জিম্মি হয়ে গেছে। হয়ত বড় বড় লোকের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। বা টাকার কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। একটা কিছু তো হবে। আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই। ২ মাস হয়ে গেলেও কোনো আশার খবরও দিতে পারেনি পুলিশ। যতদিন বেঁচে থাকব ভালো থাকা শব্দটি আমার সঙ্গে থাকবে না। ২ মাসেও আমার ছেলের খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।'

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. আদিবুল ইসলাম জানান, ঘটনার শুরু থেকে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত ছিলেন তাদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কাছে তদন্তাধীন অবস্থায় কোনো ত্রুটি ছিল কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা পুলিশ সুপার তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। এখনো তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি।'

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মুন্সিগঞ্জ সদর ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সজিবুল বলেন, 'মৃত্যুর আগে অঙ্কন দত্ত কারো নাম বলেনি। সন্দেহভাজন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যাকে বেশি অভিযুক্ত মনে হবে তাকেই শনাক্ত করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'মামলার ক্লু বের করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করছি। সহপাঠীদের সঙ্গে বহিরাগতরাও জড়িত থাকতে পারে। হত্যার কারণ এখন জানা যায়নি। সবাই এসএসসি পরীক্ষার্থী। আমরা চাচ্ছি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আসামি গ্রেপ্তার করতে। সবাই শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে অগ্রসর হচ্ছি।'

পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, 'আমরা পারিনি। তদন্ত করে বলার মতো ভালো কোনো খবর বের করতে পারিনি। মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন। মামলার বাদীর পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। যদি আসে আমরা সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে আমি নিজ দায়িত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কারো কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা সেটি দেখা হচ্ছে। আমি আমার মতো করে দেখতে চাচ্ছি পুলিশের অবহেলা আছে কিনা।'

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল বিকেলে টিউশনি শেষে মুন্সিগঞ্জ ডিসি পার্কে যায় অঙ্কন। সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে একটি অটোরিকশায় ওঠে। এরপর পেছন থেকে কে বা কারা রুমালে চেতনানাশক দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে বিদ্যালয়ের পেছনে পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে যায়। এরপরে ৪৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ১১ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়। ১৯ মে অঙ্কনের মৃত্যু হলে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

Comments