‘পুরাকীর্তিবিহীন’ ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘর, ঘুরতে এসে হতাশ দর্শনার্থীরা

মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর দুর্গ। ছবি: স্টার

'অনেক দূর থেকে এসেছি ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘর দেখতে। আশা করেছিলাম মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই দেখতে পাবো। কিন্তু জাদুঘরে ঐতিহ্যবাহী কিছুই নেই।'

কথাগুলো নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান মুস্তাকিমের। স্বজনদের নিয়ে তিনি এসেছিলেন মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘর দেখতে। দুর্গ দেখে সন্তুষ্ট হলেও যাদুঘর দেখে তিনি খুব হতাশ। কারণ জাদুঘরে পুরাকীর্তি বলতে কিছুই নেই। 

একই ধরনের কথ বলেন জাদুঘরে বেড়াতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নাইম, শিক্ষক মিজানুর রহমান, গৃহিণী সোনিয়া আক্তারসহ আরও অনেকেই। সবারই দাবি মুন্সিগঞ্জে প্রাপ্ত পুরাকীর্তিগুলো এই জাদুঘরে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হোক।

জাদুঘরে কিছু ছবি আর পোড়ামাটির রেপ্লিকা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ছবি: স্টার

ইদ্রাকপুর দুর্গ একটি মোঘল স্থাপনা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রত্নতাত্ত্বিক সার্ভে রিপোর্ট (২০০০ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত) অনুসারে, বাংলার মুঘল সুবেদার মীর জুমলা রাজধানী ঢাকাকে পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৬৬০ সালে ইদ্রাকপুর দুর্গ নির্মাণ করেন। ঢাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে বর্তমানে শুকিয়ে যাওয়া ইছামতি নদীর তীরে মুন্সিগঞ্জে নির্মিত হয় ইদ্রাকপুর দুর্গ। সময়ের পরিক্রমায় ব্রিটিশ শাসনামল থেকে দুর্গটি মহকুমা শাসক ও পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

এ ছাড়াও, দুর্গের ভেতর একটি আলাদা ভবনে ছিল জেলা কারাগার। ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসকের নতুন বাসভবন এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারও পরে নতুন কারাগার ভবন নির্মাণের পর কারাগারও স্থানান্তর করা হয়। ২০২২ সালের ১৯ মার্চ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পুরাতন কারাগার ভবনে ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘর স্থাপন করে। 

কিন্তু সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জাদুঘরে কিছু ছবি আর পোড়ামাটির রেপ্লিকা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। তাই ৪০০ বছরেরও বেশি পুরাতন দুর্গটি দেখে খুশি হলেও জাদুঘর দেখে হতাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

সভ্যতার প্রাচীন জনপদ মুন্সিগঞ্জে নিয়মিত বিরতিতেই বিভিন্ন প্রাচীন মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু সেসব পুরাকীর্তির কেনোটিই স্থানীয় জাদুঘরে প্রদর্শন করা হচ্ছে না। এতে হতাশ দর্শনার্থীরা।

আবিষ্কৃত মূর্তিগুলো মুন্সিগঞ্জ জেলা ট্রেজারিতে জমা করা হয়। ছবি: স্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সূফী মুস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জে পাওয়া বিষ্ণুমূর্তিগুলো ১৯ শতকের। এগুলো কালো ব্যাসল্ট পাথরের তৈরি অমূল্য সম্পদ। যেহেতু মুন্সিগঞ্জে জাদুঘর আছে সেহেতু এসব মূর্তি এখানকার জাদুঘরেই রাখা উচিত।'

মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ওমর শরীফ ফাহাদ (নেজারত শাখা, ব্যবসা শাখা ও ট্রেজারি শাখা) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ট্রেজারিতে কিছু মূর্তি আছে। তবে মোট কতগুলো মূর্তি আছে তা বলতে পারছি না।'

গত ১৩ এপ্রিল একটি এবং ১৭ মে ও ২০ মে আরও দুটি বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া যায় মুন্সিগঞ্জে। আবিষ্কৃত মূর্তিগুলো মুন্সিগঞ্জ জেলা ট্রেজারিতে জমা করা হয়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে মুন্সিগঞ্জ সদর ও টংগিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে ১২টি মূর্তি উদ্ধার করা হয়।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে সব জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে এটা জানতে যে, জেলা ট্রেজারিতে কতগুলো মূর্তি, শিলালিপি বা অন্যান্য পুরাকীর্তি রয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে আমরা পুরাকীর্তিগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করব। মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর দুর্গ জাদুঘরে দু-একটি মূর্তি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP's stance on president removal in Bangladesh

BNP for polls roadmap in 2 to 3 months

Unless the interim government issues a roadmap to the next election in two to three months, the BNP may take to the streets in March or April next year, say top leaders of the party.

7h ago