হুমায়ুন আজাদকে হত্যার দায়ে জেএমবির ৪ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড

বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আনোয়ারুল আলম ওরফে আনোয়ার (বায়ে) এবং মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজকে আদালত থেকে গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: পলাশ খান/ স্টার

বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, আনোয়ারুল আলম ওরফে আনোয়ার, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ও ও নুর মোহাম্মদ। তাদের মধ্যে সালেহীন ও নুর পলাতক এবং বাকি ২ জন কারাগারে আছেন।

আজ বুধবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল মামুন আদালত কক্ষে ২ আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

এর মধ্য দিয়ে ১৮ বছর পর এই হত্যা মামলার রায় হলো।

রায়ে বিচারক বলেন, প্রসিকিউশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তাদের এই জঘন্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, তারা এই রায়ে সন্তুষ্ট।

অপর দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ জানান, তারা এ রায়ে ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রায় ঘোষণার আগে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে আদালত কক্ষে আনা হয় আসামিদের। বিচারক দুপুর ১২টার দিকে রায় পড়া শুরু করেন।

বিচারক আদালত কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেএমবি জঙ্গি মিনহাজ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'সাংবাদিক বন্ধুরা, আপনারা খুশি তো? মন মতো রায় পেয়েছেন তো?'

এ সময় আনোয়ার কোনো কথা বলেননি।

এর আগে প্রসিকিউশন এবং ডিফেন্স তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেন এবং আদালত মামলার অভিযোগকারীসহ ৪২ জন সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করেন।

জেএমবি সদস্যরা ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৬ বছর বয়সী হুমায়ুন আজাদকে ছুরিকাঘাত করেন। ওই সময় তিনি রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলা থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটি রিকশায় উঠার চেষ্টা করছিলেন।

হামলার পর হুমায়ুন আজাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার তাকে ব্যাংককে পাঠায় এবং ৪৭ দিন পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।

হত্যাচেষ্টার একদিন পর হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট জার্মানির মিউনিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

পরে তার মৃত্যুতে মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়।   

২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আদালত ৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

ঘটনার ৩ বছর পর ২০০৭ সালের ১৪ নভেম্বর সিআইডির পরিদর্শক কাজী আবদুল মালেক ৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।

ঢাকার একটি আদালত অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবিরের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২০ অক্টোবর মামলাটির আরও তদন্তের নির্দেশ দেন।

পুনঃতদন্তের পর ৫ জেএমবি নেতাকে অভিযুক্ত করে সিআইডি একটি নতুন চার্জশিট দাখিল করে এবং ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল মামলাটিকে হত্যা মামলায় পরিণত করার জন্য আদালতে আবেদন করে।

তাদের মধ্যে হাফিজ ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর টাঙ্গাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

তদন্তকালে মিনহাজ ও নুর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ।

Comments

The Daily Star  | English

Settle disputes through dialogue, say 'no' to wars, says PM at UNESCAP meet

Prime Minister Sheikh Hasina today called for speaking out against all forms of aggression and atrocities, and to say 'no' to wars

6m ago