হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল ছাত্রলীগ নেতা আব্বাসকে

আবু আব্বাস ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

প্রথাবিরোধী লেখক ও ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায়ে ৪ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। কিন্তু ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ওই ঘটনার পর পুলিশ  তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা আবু আব্বাস ভূঁইয়াকে এই মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল।

২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার পরদিন রমনা থানার পুলিশ আব্বাস ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে।

আব্বাস তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বের হওয়ার পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নির্দেশে আব্বাস ওই হামলা চালিয়েছিলেন, এমন স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য পুলিশ তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল।

আজ শুক্রবার আব্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশ আমাকে চোখ বেঁধে মারধর শুরু করে। আমি নাকি শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে ওই হামলা করেছি। তারা আমাকে এভাবে স্বীকারোক্তি দিতে বলে।'

'আমি তাদের বলি আমি নির্দোষ। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু তারা শোনেনি, বরং ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে আমার ওপর। একপর্যায়ে তারা আমাকে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে,' ভয়াবহ সেই নির্যাতনের কথা স্মরণ করে বলছিলেন আব্বাস।

'আমি অজ্ঞান হওয়ার পর্যায়ে গেলে তারা আমাকে নামায়। কিন্তু চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে আঙুলে মারতে থাকে। এত জোরে মারে যে আমার বাম হাতের ৩টি আঙুল ভেঙে গিয়েছিল। ভয়াবহ যন্ত্রণা হচ্ছিল। একের পর এক লাথি মারছিল,' বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমাকে ৩-৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ এভাবে নির্যাতন চালাতে থাকে।'

রিমান্ডের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'যতটুকু মনে করতে পারি, পুলিশ আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে একটি রুমে আটকে রেখেছিল। তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পানি চাইলাম। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে পানি দেয়নি কেউ।'

'সেই অত্যাচারের কথা মনে পড়লে এখনো আমার চোখে পানি চলে আসে,' কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আব্বাস বলছিলেন।

তিনি বলেন, 'হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে আমার ও আমার সংগঠনের তো কোনো আদর্শিক বিরোধ ছিল না। পুলিশ কেন আমাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করল, বুঝতেই পারিনি।'

আব্বাস বলেন, 'নির্যাতনের পর থেকে এখনো প্রায়ই আমার শরীরে ব্যথা অনুভব করি এবং ওষুধ খেতে হয়। আমার বাঁ হাতের ৩টি আঙুল ভাঙা।'

গ্রেপ্তারের ১২ দিন পর আব্বাস জামিনে মুক্তি পান। মামলার তদন্ত শেষে সিআইডি চার্জশিট দাখিলের সময় তার নাম বাদ দেয়।

'তবে ততদিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে,' আব্বাস বলেন।

'পুলিশ এর মধ্যে আমাকে একজন ভয়ঙ্কর অপরাধী হিসেবে মিডিয়ায় পরিচিত করে দিয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

আব্বাস ১৯৯৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

তার বিরুদ্ধে এর আগে কোনো জিডি না থাকলেও, হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে বোমা আব্বাস হিসেবে চিহ্নিত করে।

পরবর্তী বছরগুলোতে ক্যাম্পাসে কোনো বোমা হামলা হলেই তাকে আসামি করা হতো বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, পরে তাকে ১ ডজনের বেশি মামলার আসামি করা হয়।

পরের বছর ঢাবি ক্যাম্পাসের টিএসসিতে ভ্যালেন্টাইন ডে তে বোমা হামলার ঘটনায় পুলিশ আবারো আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে।

সে সময় তাকে ৪ মাস জেল খাটতে হয়।

তিনি জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে কিছু মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাকি মামলাগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পান।

ন্যায়বিচারের আশায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আব্বাস রমনা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান ও উপপরিদর্শক রেজাউলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

পরে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে সেই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয় বলে আব্বাস জানান।

তিনি বলেন, 'মামলা চালাতে আমার মাকে জমি বিক্রি করতে হয়েছে। মা গ্রামে থাকতেন। কিন্তু তাকে সে সময় প্রায়ই গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে জেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে হতো।'

আব্বাসের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। ৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে আব্বাস দ্বিতীয়। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি বাবাকে হারান।

২০১৭ সালে তার মা মারা যান বলে জানান তিনি।

ওই ঘটনা তার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আব্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য যা কিছু করা দরকার তা আমার সাথে করা হয়েছে।

তিনি বর্তমানে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its Standing Committee Member Salahuddin Ahmed, will file the complaint

23m ago