‘এক মুঠা গোস্তর লাগি মানষের ঘরে ঘরে ঘুররা’

হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র। ছবি: স্টার

আশ্রয়কেন্দ্রে পারভিন বেগম রান্না করছেন আলুবিরান (আলুভাজি), ডাল ও ভাত। ঈদের দিনে আর কিছু রান্না হয়নি তার।

হাকালুকি হাওর পাড়ের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের বাসিন্দা পারভিন বেগম জানান, বন্যায় তার ঘর ভেঙে গেছে। পরিবার নিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে।

প্রায় এক মাস হতে চলেছে। বন্যার পানি না নামায় এখনো নিজ ভিটায় ফিরতে পারেননি তারা। তাই এবারের ঈদ তাদের কাটছে আশ্রয়কেন্দ্রে।

রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পারভিন বেগম। ছবি: স্টার

আজ রোববার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয় পারভিন বেগমের সঙ্গে।

'আপনার স্বামী কোথায়' জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এক মুঠা গোস্তর লাগি মানষের ঘরে ঘরে ঘুররা। গত ২ মাসে কোনো মাংস খাইসি না। আর আশ্রয়কেন্দ্রে আওয়ার পর চিন্তাও করতাম পারি না। গোস্ত পাইলে অনেক দিন পর খাওয়ার সুযোগ হইবো পরিবার লইয়া।'

দুপুরের দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ তেমন দেখা যায়নি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হকলে গেছইন গরুর গোস্তর লাগি।'

ঈদে কিছু কিনেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরার ঈদের আনন্দ বন্যায় কাড়িয়া নিছেগি। বন্যায় আমরারে একেবারে শেষ করি দিছে। ঘর-দুয়ার সবতা ভাঙি গেছে। পরিবার নিয়া আশ্রয়কেন্দ্রে আইজ প্রায় ১ মাস ধরি আছি।'

তিনি আরও বলেন, 'খুব কষ্টে দিন যার। আশ্রয়কেন্দ্রে আইছলাম শান্তির লাগি। ইকানো আইয়া মনে অর আমরা অপরাধ করছি। একদিন ইউএনও সাহেব হুখনা খাবার ও একদিন মন্ত্রী চাউল-ডাইল অতা তোড়া দিছইন। আর ২-৩ দিন খিচুড়ি আর পোলাও পাইছি। ইতায় তো পেট ভরে না। স্বামীর রুজি নাই। মানইষের কাছে হাত পাতিয়ার।'

একই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠেছেন সালেহা বেগম। তিনি বলেন, 'হাঁস-মুরগি বিক্রি করে পরিবার চলতো। কিন্তু সব বন্যায় গেছেগি। একমাস ধরি অনো আছি। কাম-কাজ নাই। ঈদ কিলা কাটব ইতা আপনারাই বুঝইন।'

পারভিন-সালেহার মতো হাকালুকি হাওড়পাড়ে বন্যা কবলিত অধিকাংশ এলাকার মানুষকে ঈদের আনন্দ যেন স্পর্শ করতে পারেনি। বিশেষ করে ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের মনে ঈদ উৎসবের কোনো আমেজ নেই। তাদের সব আনন্দ ভেসে গেছে বানের জলে।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, '৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৪০টিতে মানুষ আছেন। সেখানে আমরা অনেক কিছুই বিতরণ করেছি। তাছাড়া ৪০০ প্যাকেট খাদ্যদ্রব্য ঈদ উপহার হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণ করা হচ্ছে। শনিবার কিছু বিতরণ করা হয়েছে। আজ ঈদের দিন বাকিগুলো বিতরণ হয়েছে।'

আজ জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৩ হাজার ১০৬ জন বানভাসি মানুষ এখনো রয়েছেন জেলার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

8h ago