আমে ফ্রুটব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে

মোমের আবরণসহ বহু-স্তরযুক্ত ফ্রুটব্যাগের ভেতরে আম চাষের বিশেষ পদ্ধতিতে ভোক্তাদের জন্য কোনো সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে না। তবে ফ্রুটব্যাগের জন্য অতিরিক্ত খরচ ফলটিকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে।
নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ফল উৎপাদনের এই নিশ্চিত পদ্ধতিটি দেশের আম উৎপাদকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কারণ, বর্ধিত খরচে চাষ করে উচ্চতর লাভ করা যাচ্ছে। বেশি লাভের আশায় আম উৎপাদকদের মধ্যে 'ফ্রুটব্যাগিং' পদ্ধতি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
কৃষিবিদ ড. সরফ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রচলিত নিয়মে আম চাষ করে, কৃষক বলতে পারেন না যে গাছে আম থাকলেই সেটা তিনি বাজারজাত করতে পারবেন। কিন্তু, ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করে তারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে পরিবহনের সময় কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ছাড়াই বাজারে আম পৌঁছাবে।'
তার মতে, কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা ছাড়াও, ব্যাগগুলো ঝড়, মুষলধারে বৃষ্টি ও এমনকি শিলাবৃষ্টি থেকেও আম রক্ষায় সহায়তা করে। এমনকি, ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতি সহ্য করতে পারে।
ব্যাগগুলো নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় আম শুকনো রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, ফলকে দীর্ঘক্ষণ সজীব রাখে, যাতে কৃষকরা তাদের ইচ্ছামতো সেগুলো বাজারে নিতে পারেন।
প্রতি বছর আম চাষে ফ্রুটব্যাগের চাহিদা প্রায় ১ কোটি থেকে দেড় কোটি পিস বাড়ছে বলেও জানান ড. সরফ উদ্দিন।
২০১৬ সালে প্রথম যখন এই পদ্ধতি চালু হয়েছিল, তখন প্রায় ৬০ হাজার ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। ২০২২ সালে প্রায় ১২ কোটি ব্যাগ আম চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে চলতি বছর প্রায় ১০ কোটি ফ্রুটব্যাগ ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি ২ কোটি ব্যাগ ব্যবহৃত হয়েছে নওগাঁ, রাজশাহী ও অন্যান্য শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোয়।
রাজশাহীর জিন্নাহনগর এলাকায় দেখা গেছে, রাজশাহী সেফ এগ্রো ফুড প্রোডিউসার্স সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হকের মালিকানাধীন বাগানে বাদামি ব্যাগে আম ঢেকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'এ বছর মোট ১ লাখ আমে ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে এবং ২০ টনেরও বেশি রপ্তানিযোগ্য আম পাওয়ার আশা করছি।
ফ্রুটব্যাগে প্রতি মন (৪০ কেজি) আমের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয় ১ হাজার টাকা। প্রতিটি ব্যাগের দাম ৪ টাকা এবং তা ব্যবহারে শ্রম খরচ ১ টাকা।
সাধারণ আম ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও, তার আমগুলো উন্নতমানের হওয়ায় প্রতি মন ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমের ব্যাগ ব্যবহার করায় লাভ হবেই।'

এ ধরনের ব্যয়বহুল ফলের ক্রেতা সম্পর্কে আনোয়ারুল হক বলেন, 'প্রায় ২০০ ক্রেতা আছেন যারা স্বাস্থ্য সচেতন এবং উন্নতমানের হওয়ার কারণে কেবল এখান কাছ থেকে আম সংগ্রহ করেন।'
'এ ছাড়া, কয়েকজন রপ্তানিকারক আমার আম সংগ্রহ করেন,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রতি বছর প্রায় ২০ টন আম ৮ দেশে যায়।'
আমের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে তবে রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে এই পদ্ধতির ব্যবহার আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করেন কৃষিবিদ সরফ উদ্দিন। তিনি জানান, আম রপ্তানি বেড়েছে। তবে তা এখনো মোট উৎপাদিত আমের তুলনায় খুব সামান্য। বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষ এখনো এত দামে আম কিনছেন না বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে শুধুমাত্র মাঝারি ও বড় চাষিরা ফলের ব্যাগ ব্যবহার করছেন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষুদ্র চাষি ব্যাগের ব্যয় বহন করতে পারেন না।
আমের ব্যাগ লাগাতে হয় এপ্রিল ও মে মাসে—ধান কাটার ঠিক আগে। সে সময় ক্ষুদ্র কৃষকরা অর্থ সংকটে থাকেন।
গবেষকরা বলছেন, ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ফলের ব্যাগের দাম সহনীয় হত যদি ফ্রুটব্যাগের ওপর আরোপিত ৬৩ শতাংশ আমদানি শুল্ক হ্রাস করা যেত।
Comments