চরাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে বাসক চাষ

ভারতবর্ষে কৃষিভিত্তিক আবহাওয়া পূর্বাভাসবিদ্যার পথিকৃৎ, সিংহলের রাজকন্যা বিদুষী খনার বচনে পাওয়া যায়, ‘বাসক পাতার এমন গুণ, পুরনো কাশে ধরে ঘুণ’।
basok_31july21.jpg
দুই বছর আগে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর শাখা হাতীর বাসিন্দা লায়লা বেগম ১৫ শতাংশ জমিতে বাসকের চাষ শুরু করেছিলেন। এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাসকের চাষ করছেন। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ভারতবর্ষে কৃষিভিত্তিক আবহাওয়া পূর্বাভাসবিদ্যার পথিকৃৎ, সিংহলের রাজকন্যা বিদুষী খনার বচনে পাওয়া যায়, 'বাসক পাতার এমন গুণ, পুরনো কাশে ধরে ঘুণ'।

যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলে সর্দি-কাশিসহ শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে কিংবা পরিচিতি বিভিন্ন ব্যাধির উপশমে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ঔষধি বৃক্ষ বাসক পাতার রস। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বাসকের বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। দিন দিন তা কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে।

দুই বছর আগে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম চর শাখা হাতীর বাসিন্দা লায়লা বেগম ১৫ শতাংশ জমিতে বাসকের চাষ শুরু করেছিলেন। প্রথম পর্যায়ে বালু মাটিতে লাগানো গাছগুলো কিছু দিনের মধ্যে মরে যায়। পরে তিনি জৈব সার মিশিয়ে আরও ভালোভাবে মাটি তৈরি করে পুনরায় বাসকের চারা লাগান। এখন পরিণত বাসক গাছে তার বাগানটি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

লায়লার স্বামী আব্দুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের দেখাদেখি চরের অনেক বাসিন্দা বাড়িতে বাড়িতে বাসকের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন। ২০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাসকের পাতা কিনে নিচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের উপশমে চরের বাসিন্দারা নিজেরাও এই পাতা ব্যবহার করছেন।

একই উপজেলার চর মনতলার বাসিন্দা খাদেম আলী এ ব্যাপারে বলেন, চরের মানুষ চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার ও ওষুধ পায় না। এ ছাড়া তাদের আর্থিক সামর্থ্যও কম। তাই রোগের চিকিৎসায় এখানে বাসক পাতার ব্যবহার বেড়েছে। একটু বাড়তি যত্ন নিলে বাসকপাতার ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাই অনেকেই এখন বাসক চাষে উৎসাহী হচ্ছেন। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর বাগডোরার কৃষক নাদিম হোসেনের ভাষ্য, আগে তারা ভাবতেই পারেননি যে বালু মাটিতে বাসকের চাষ করা সম্ভব। তিনি বলেন, 'কৃষি বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিদের পরামর্শে বাসক চাষ শুরু করে আশানুরূপ ফল পাচ্ছি। এই গাছ এখন আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।'

অশীতিপর নজর আলী বলেন, আগে বাসক পাতা সংগ্রহের জন্য চরের মানুষকে অনেক দূর যেতে হতো। পয়সা খরচ করে কিনে আনতে হতো। এখন তা হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে।

কুড়িগ্রাম শহরের হার্বাল চিকিৎসক প্রভাষ চন্দ্র দেবনাথ ডেইলি স্টারকে বলেন, বাসক পাতায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো বুকে জমে থাকা কফ গলিয়ে ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এ ছাড়া বাসকপাতার রস সর্দি-কাশির উপশমেও কার্যকর।

প্রভাষ চন্দ্র দেবনাথ আরও জানান, যক্ষা রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি বাতের ব্যথা কমাতে, রক্ত পরিষ্কার করতে, জ্বর সারাতে, শ্বাসকষ্ট কমাতে, গলা ব্যাথার উপশমে, চর্মরোগ ও শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে কিংবা খিঁচুনির সমস্যা দূর করতেও এই পাতার ব্যবহার প্রচলিত।

এই চিকিৎসক বলেন, 'আমরা চরের চাষিদের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত বাসকের পাতা কিনে আনি। এই পাতা বেটে রস করে সরাসরি খাওয়া যায়। আবার গরম রস ঠান্ডা করেও খাওয়া যায়।'

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

7h ago