‘প্রত্যাশিত দামে পেয়ারা বিক্রি করতে পারছি’

ছবি: স্টার

দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেয়ারার জন্য যা স্থানীয়দের কাছে গৈয়া নামে পরিচিত।

কথিত আছে, কমপক্ষে ৩০০ বছর আগে ভারতের গয়া থেকে এক ব্যক্তি প্রথমে নেছারাবাদে পেয়ারা এনে চাষ শুরু করেন। কারো মতে, পেয়ারার ইংরেজি শব্দ গুয়াভা পরিবর্তিত হয়ে গৈয়া নাম ধারণ করেছে।

মৌসুমি ফল পেয়ারা এই ২ জেলার ২ উপজেলার প্রায় ৪ ইউনিয়নের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল। একটি গাছ সামান্য যত্নেই বছরের পর বছর ফল দেয়।

ছবি: স্টার

পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বহু বছর ধরে পেয়ারার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এ এলাকার চাষিরা। তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পাকা পেয়ারা সর্বোচ্চ ২ দিন সংরক্ষণ করা যায়। তাই গাছ থেকে সংগ্রহের এক দিনের মধ্যে বাজারে পৌঁছাতে না পারলে পেয়ারা নষ্ট হয়ে যায়।

তারা আরও জানান, লঞ্চ বা ট্রাকে পেয়ারা পরিবহনে অনেক সময় লাগে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে চান না। অন্যদিকে, গাছ থেকে দ্রুত সংগ্রহ না করলে, পাকা পেয়ারা ঝরে পড়ে।

বিরূপ পরিস্থিতিতে এক মণ পেয়ারা ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। প্রতি কেজির দাম পড়ে ২-৩ টাকা। শ্রমিক দিয়ে পেয়ারা সংগ্রহ করলে প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। একজন শ্রমিক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ মণ পেয়ারা সংগ্রহ করতে পারেন। সেই হিসাবে শ্রমিক দিয়ে পেয়ারা সংগ্রহ করলে, সেই পেয়ারা বিক্রি করে মজুরি দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ থেকে বিরত থাকেন।

ছবি: স্টার

জুলাইয়ের শুরুর দিকে পেয়ারা সংগ্রহ শুরু হয়ে পরবর্তী ২ মাস পুরোদমে পেয়ারার বিক্রি চলে। শুরুর দিকে ৫০০-৭০০ টাকা মণ দরে পেয়ারা বিক্রি হলেও, জুলাইয়ের শেষ দিকে দাম কমতে থাকে।

এ বছরের চিত্র পুরো উল্টো। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি মণ পেয়ারা ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা মৌসুম জুড়ে একই দামে পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। পদ্মা সেতু তাদের মনে আশা জাগিয়েছে।

চাষিরা জানান, খুব সকালে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহের পর তারা ছোট ছোট নৌকায় করে সেগুলো ভাসমান পাইকারি বাজারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে পাইকারি ক্রেতারা সেগুলো ট্রাকে দুপুরের মধ্যেই ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় নেওয়া শুরু করেন। এক দিনের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে পরের দিন সকালে সেগুলো আড়তে বিক্রি করতে পারেন।

মূলত পেয়ারার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অনেক চাষি গত কয়েক বছরে তাদের বাগানে আমড়া ও অন্যান্য ফলের গাছ লাগিয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান পেয়ারা চাষি ভোজেন্দ্রনাথ মৃধা।

পেয়ারা চাষি সুখরঞ্জন হালদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত, পেয়ারার মৌসুমে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে হতাশার সৃষ্টি হত। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত দামে পেয়ারা বিক্রি করতে পারছি।'

ছবি: স্টার

ট্রাকচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পেয়ারা নিয়ে এখন সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টার মধ্যে নেছারাবাদ থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যায়।'

পেয়ারা চাষিরা জানান, প্রতি মণ পেয়ারা ৫০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করতে পারলেই তারা খুশি। পদ্মা সেতু চালুর পর অনেক পাইকারি ক্রেতা আসায় এবং অল্প সময়ে পেয়ারা পরিবহন করতে পারায় এখন পর্যন্ত পেয়ারার ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।'

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের প্রায় পুরো অংশ জুড়ে রয়েছে পেয়ারা বাগান। এ ছাড়া, উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নের কিছু অংশেও পেয়ারা বাগান রয়েছে। নেছারাবাদ উপজেলায় ৬০৭ হেক্টর জমিতে রয়েছে পেয়ারা বাগান এবং গত বছর প্রতি হেক্টর জমি থেকে গড় উৎপাদন ছিল সাড়ে ৮ টন পেয়ারা।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ও নবগ্রাম ইউনিয়ন জুড়ে রয়েছে পেয়ারার বাগান। এ উপজেলায় ৫৩০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার বাগান রয়েছে এবং গড় উৎপাদন বছরে ১০ টন।

ছবি: স্টার

পেয়ারা চাষিরা প্রতিদিন উৎপাদিত পেয়ারা কুড়িয়ানা, আটঘর, জিন্দাকাঠী, আদমকাঠী ও ভীমরুলীসহ এক ডজনেরও বেশি ভাসমান হাটে বিক্রি করেন।

পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিঃসন্দেহে পদ্মা সেতু পেয়ারা চাষিদের জন্য আশীর্বাদ। এখন গাছের ফল পচে যাওয়া বা নামমাত্র মূল্যে ফল বিক্রি করা নিয়ে চাষিদের দুশ্চিন্তা করতে হবে না।'

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম মনে করেন এ বছর পেয়ারার দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বলেন, 'পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পাইকারি ক্রেতারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেয়ারা কিনে সেগুলো তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। কৃষক ও পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা লাভবান হচ্ছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt decides to ban activities of AL until completion of ICT trial

Law Adviser Prof Asif Nazrul said this at a press briefing after a special meeting of the advisory council tonight

1h ago