বৈরী আবহাওয়ায় কমতে পারে বোরোর ফলন

ফাইল ফটো

চলতি বোরো মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ধানের ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বীজ বপন ও চাষের সময় ভালো আবহাওয়া থাকলেও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাটা শুরু হওয়ার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি অনেক এলাকায় ফসলের ক্ষতি করতে শুরু করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সতর্ক করেছে, মে মাসের শেষের দিকে আরও ঝড় হতে পারে। ঝড়ের আগেই ফসল ঘরে তুলে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা।

তবে কৃষকদের অভিমত, ফসল কাঁচা থাকলে ঝড়ের আগে ফসল কাটা বেশিরভাগ সময় সম্ভব হয় না।

কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, ঝড়ের আগে বোরো ধান কাটতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে অনেকেই বোরো ধান চাষ শুরু করতে দেরী করেন। কারণ, বোরো বপনের আগে অতিরিক্ত এক ফসল চাষ করতে কৃষক আগ্রহী হয়ে থাকেন। এতে বোরো ফসলের ক্ষতি হয়।

উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, রাজশাহীর বোরোর আগে আলু এবং নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে চলনবিল এলাকায় সরিষা চাষ করা হয়। ফলে বোরো চাষে বিলম্ব হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে ১০ মে পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ হেক্টর বোরো জমির ৩১ শতাংশের ফসল কাটা হয়েছিল। এতে ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৯৯ টন চাল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ফলন গত বছরের ফলন থেকে প্রতি হেক্টরে অন্তত শুন্য দশমিক ২৭ টন কম।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ খায়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, 'হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান কাটা শেষ হলে মোট ফলন আরও বাড়বে।'

তবে, এ বছর ফলন কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

চাষি ও কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, চলনবিলের কৃষক সাধারণত তাড়াতাড়ি ধান ঘরে তোলেন। কারণ বৃস্টি হলে বিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

বিলের ফসল কাটা শেষ হলে সমতল এলাকাগুলোতে ফসল কাটা শুরু হয়।

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বছর এপ্রিলের মাঝামাঝিতেই ফসল কাটার কথা বলা হলে সমতল জমির কৃষক সমস্যায় পরেন। কেননা, সমতল এলাকার ক্ষেতমজুররা ধান কাটতে বিল এলাকায় যাওয়ায় শ্রমিক সংকট তৈরি হয়।

এই কারণে অনেক কৃষক ঝড়ের আগে ফসল কাটতে পারেননি। ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের ধান হেলে পরেছে এবং ফলন কমে গেছে।

বিল এলাকায় ধান কাটা শেষ করে ক্ষেতমজুররা নিজ জেলার ফসল কাটাতে বাড়ি ফিরবে।

সম্প্রতি চলনবিল এলাকার নাটোরের সাতপুকুরিয়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ কৃষক ইতিমধ্যেই তাদের ফসল ঘরে তুলেছেন। চলনবিলের রাস্তাগুলোতে ধান প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলছে।

এই এলাকার কৃষক বলছেন, কিছু ধান তারা নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করবেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলনবিল এলাকায় প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়।

নাটোরের সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে প্রায় ৮৬ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হলেও সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় মাত্র ৩৫ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কৃষক হোসেন আলী লেবু জানান, তার ৩০ বিঘা বোরো জমি থেকে চলতি মৌসুমে ২০০ মণ কম ধান সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এতে তার ২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ঝড়ে আমার ধানের শীষ মাটিতে হেলে পড়ে। এই সামান্য ক্ষতিই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। কারণ ডিজেল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষের খরচ এবার অনেক বেশি ছিল।'

তিনি জানান, সরিষা তোলার পর বোরো চাষ করতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছেন তিনি।

অপর কৃষক মো. জুয়েল জানান, তার ১৫০ বিঘা জমিতে ভালো ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আবহাওয়া ভালো ছিল, ফলনও ভালো হয়েছে।'

তিনি স্থানীয় জাত থেকে প্রতি বিঘায় ২০ মণ ফলন পেয়েছেন এবং হাইব্রিড জাতগুলো থেকে প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩৫ মণ ফলন পেয়েছেন৷

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

9h ago