ব্রহ্মপুত্রের বুকে বাদামের হাট

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বৃহত্তর রংপুরের সবচেয়ে বড় বাদামের হাট বসছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে। বাদামের এ হাটটি নির্দিষ্ট কোনো স্থানে স্থায়ীভাবে বসানো হয় না। প্রতিবছর হাটের স্থান পরিবর্তন হয়ে থাকে।

মূলত নৌঘাটের ওপর নির্ভর করে বাদামের হাটটি বসানো হয়। এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদে পানি স্বল্পতার কারণে নৌঘাট করা হয়েছে ফালুয়ার চরে। এর পাশে বসানো হয়েছে বাদামের হাট। গত বছর বাদামের হাট বসানো হয়েছিল জোড়গাছ চরে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

চরের কৃষকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, নৌঘাটের পাশে বাদামের হাট বসানোয় তারা লাভবান হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে বাদাম কিনে থাকেন। বালুচর ডিঙিয়ে বাদাম বহন করে মূল ভূখণ্ডে বিক্রি করতে চাষিদের অনেক বেগ পেতে হতো। তাই ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকায় বাদামের হাট বসায় তারা খুশি।

ফালুয়ার চরের কৃষক বখতিয়ার হাসান (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। ৭ বিঘা জমি থেকে ৯০ মণ বাদাম পেয়েছি।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বাদামের চাষ চরের মানুষের কাছে আশীর্বাদ' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'উৎপাদিত বাদাম বিক্রি করে সংসার সচ্ছলতা আনতে পেরেছি। এ ছাড়া, চরে বাদামের হাট বসায় উৎপাদিত বাদাম বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।'

কৃষক সিদ্দিক আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক বছর আগে ভালো বীজ সম্পর্কে জানা ছিল না। সার-কীটনাশকও ব্যবহার করা হতো না। তাই ফলন কম ছিল। এখন ভালো বীজে বাদাম চাষ করছি, সার-কীটনাশকও ব্যবহার করছি। ফলন পাচ্ছি আশানুরূপ।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রায় ৮৭ হাজার টাকা খরচ করে ৯ বিঘা জমি থেকে ১১০ মণ বাদাম পেয়েছি। প্রতি মণ বাদাম ৩৫ হাজার টাকা দরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করি তাই শ্রমিক খরচ নেই বললেই চলে।'

'বাদাম চাষের জমিতে অন্য ফসলের ফলনও আশানুরূপ পাওয়া যায়' বলেও জানান তিনি।

বাদাম ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরে সপ্তাহে ২ দিন বাদামের হাট বসে। প্রতি হাটে ১৫০-২০০ মেট্রিক টন বাদাম বেচা-কেনা হয়। ব্রহ্মপুত্রের চরে উৎপাদিত বাদাম মানসম্পন্ন হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানে আসেন।'

'স্থানীয় বাদাম ব্যবসায়ীদের অনেকে কৃষকের কাছ থেকে বাদাম কিনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। অনেক পাইকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে থাকেন।'

'আমরা কৃষকের কাছ থেকে প্রতিমণ (৪০ কেজি) বাদাম ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার দরে কিনছি,' যোগ করেন তিনি।

আরও বলেন, 'এ হাটে বাদাম কিনে অনেক পাইকার নৌকায় করে গন্তব্যে চলে যান। অনেক পাইকার কেনা বাদাম মূল ভূখণ্ডে নিয়ে ট্রাকে করে গন্তব্যে যান।'

অপর বাদাম ব্যবসায়ী নবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহত্তর রংপুরে ব্রহ্মপুত্রের বুকে বাদামের এই হাট সবচেয়ে বড়। চরের চাষিরা তাদের উৎপাদিত বাদাম এখানে বিক্রি করে থাকেন। বড় হাট হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাদামের অনেক বড় বড় পাইকার এ হাটে আসেন। বাদাম ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ টহল দিয়ে থাকেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি কৃষকের কাছ থেকে বাদাম কিনে মজুত করছি। এ পর্যন্ত ৩০ মেট্রিক টন বাদাম কিনেছি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ হাট শুরু হয়েছে এবং চলবে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।'

রাজধানী ঢাকা থেকে আসা বাদাম ব্যবসায়ী শফিকুল সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিবছরই ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বাদামের হাটে আসি এবং বাদাম কিনি। এ পর্যন্ত ১০০ মেট্রিক টন বাদাম কিনেছি। কিছু বাদাম সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনেছি, কিছু কিনেছি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।'

তিনি আরও বলেন, 'চরের হাটে কেনা বাদাম ঘোড়ার গাড়িতে করে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যাই। পরে তা ট্রাকে করে ঢাকায় নিই।'

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক বাদাম চাষ করেন। তারা নিম্নে ৫ বিঘা ও সর্বোচ্চ ৩০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে থাকেন।

অক্টোবরের মাঝামাঝি বাদাম লাগানো হয়। ক্ষেত থেকে বাদাম তোলা হয় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। প্রতি বিঘা জমি থেকে চরের কৃষক ১২-১৫ মণ বাদাম পেয়ে থাকেন। এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করতে খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে উৎপাদিত বাদাম বৃহত্তর রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বাদাম চাষ করে চরের কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বাদাম ঘরে তোলার পর কৃষকরা জমিতে ভুট্টা, কালো জিরা, চিনা, তিল, কাউন, গমসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কৃষি বিভাগ থেকে চরের চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।'

Comments

The Daily Star  | English
China urges US for fair trade talks

China warns countries against striking trade deals with US at its expense

Beijing "will take countermeasures in a resolute and reciprocal manner" if any country sought such deals, a ministry spokesperson said

1h ago