ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু অক্টোবরে
ঢাকার বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ আগামী মাস থেকে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সম্প্রতি এই প্রকল্পের জন্য চীন থেকে তহবিল পাওয়ার অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে 'ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালসেতু' প্রকল্পের খসড়া ঋণ চুক্তি অনুমোদন করেছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চীনের এক্সিম ব্যাংক দীর্ঘ সময় নিয়ে অবশেষে উড়াল সেতুর জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণের অনুমোদন দিয়েছে, যা টাকার অংকে ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি।
তারা জানান, চীন প্রকল্পের সামগ্রিক খরচ ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার ৬৫ শতাংশ বহন করবে।
প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক এ মাসেই চুক্তিতে সই করার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আশা করছি প্রকল্পের কাজ আগামী মাস থেকে শুরু হবে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাও দ্য ডেইলি স্টারকে এ মাসের মধ্যে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনার কথা নিশ্চিত করেন।
২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আব্দুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল হয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অবস্থিত ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলকে (ডিইপিজেড) যুক্ত করবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে।
এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ৩০টি জেলার মানুষের ঢাকায় যাতায়াত সহজ হবে। এর ফলে দেশের জিডিপি পরোক্ষভাবে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ বাড়বে বলে প্রকল্পের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পয়েন্ট পর্যন্ত 'ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের' নির্মাণ কাজ চলছে। বিমানবন্দর-বনানী-মগবাজার-কমলাপুর-সায়দাবাদ-যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালীর মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েটির সংশোধিত উদ্বোধন সময়সীমা ২০২৩ সালের জুন মাস।
এক্সপ্রেসওয়ে দুটি হলে দেশের উত্তর, পশ্চিম আর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বাসিন্দারা ঢাকার ভেতরের যানজট এড়িয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে পারবেন।
ট্রাক ও লরির মতো যানবাহনগুলো দিনের বেলায়ও এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমানে এসব যানবাহনের দিনের বেলা রাজধানীতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।
২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি চার বছর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। কথা ছিল ২০১৭ সালে এর নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
তবে চীনা কর্তৃপক্ষ ঋণ অনুমোদন করতে দীর্ঘ সময় নেওয়ায় এই প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। এখন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এই কাজ শেষ করার জন্য আরও চার বছর সময় চাইছে।
সরকার শুরুতে এই প্রকল্পের কাজ সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে শেষ করতে চেয়েছিল এবং অর্থনীতি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১১ সালের জুলাই মাসে এর অনুমোদন দেয়।
সে সময় ২ বিলিয়ন ডলার খরচে ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, পরবর্তীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নকশা এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া, দুটিতেই পরিবর্তন আনা হয়।
এরপর সরকার চীনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি) চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
২০১৯ সালের ১১ জুলাই সেতু ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তিনি ওই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী।
আগামী মাসে কাজ শুরুর সম্ভাবনা
সূত্রগুলো জানায়, চীনের এক্সিম ব্যাংক গত বছরের নভেম্বরে ঋণের অনুমোদন দিয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে খসড়া ঋণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয় এবং সেটি ২ সেপ্টেম্বর অনুমোদন পায়।
প্রকল্প পরিচালক শাহাবউদ্দীন খান জানান, তহবিল সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা শেষ হয়েছে এবং ঠিকাদার ইতোমধ্যে এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে কিছু কাজ শুরু করেছে।
তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী, চীনের ঠিকাদারকে চুক্তি সইয়ের পর প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ ৬২ মাস সময় দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, 'তবে আমরা ৪ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।'
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে।
Comments