‘আগুন নেভাতে যেতে হবে’ কথা শেষ না করেই চলে গেল

গাউসুলকে দেখতে আইসিউতে প্রবেশ করতে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের ফায়ারফাইটার গাউসুল আজম (২৩) গত শনিবার রাত ৯টার দিকে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ খবর এল, আগুন লেগেছে বিএম কনটেইনার ডিপোতে। স্ত্রীর সঙ্গে কথা শেষ না করেই ফোন কেটে দিয়ে রওনা হয়ে যান গাউসুল।

বিএম ডিপোতে অগ্নি নির্বাপণের কাজে গিয়ে দগ্ধ হলেন তিনি। শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে বর্তমানে তিনি ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় আইসিইউর সামনে গাউসুল আজমের বাবা আজগর আলীর সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকের।

সীতাকুণ্ড বিএম ডিপোতে পড়ে থাকা ফায়ার সার্ভিসকর্মীর হেলমেট। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

তিনি জানান, তাদের বাড়ি সাতক্ষীরায়। ৬ মাস হলো গাউসুল সীতাকুণ্ডে বদলি হয়েছে।

রোববার রাতে খবর পেয়ে আজগর আলী আরও ২ জন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শনিবার রাতে ছেলে ফোনটা যে রেখে দিলো, আর ফোন করল না। প্রতিদিন সে ৫-৬ বার করে বাড়িতে ফোন করে কথা বলে। স্ত্রী-বাচ্চার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে। আর পুরো একদিন কোনো খবরই নাই।'

কথা বলতে বলতেই তিনি পায়চারী করতে করতে আইসিইউতে ছেলেকে দেখার চেষ্টা করেন। জানালেন, গত রাতে একবার মাত্র দেখেছেন ছেলেকে।

আজগর আলী জানান, গাউসুল তার একমাত্র ছেলে। আড়াই বছর হলো বিয়ে করেছে। ৫ মাস বয়সী ছেলে আছে, নাম তার সিয়াম।

তিনি বলেন, 'ছেলের এই অবস্থা। দূরে থেকে দেখলাম মুখে অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে, শরীর ফুলে গেছে। কাছে যেতে দিচ্ছে না।'

'ছেলের মা, স্ত্রী ফোন দিচ্ছে। তাদের বলেছি ভালো আছে, চিকিৎসা চলছে। ভালো হয়ে যাবে। জানি না কী হবে,' বলেন আজগর আলী।

কথা বলতে বলতে তিনি আইসিইউর ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেন। সেখানে কর্তব্যরত নার্স তাকে বাঁধা দিলে তিনি মন খারাপ করে ফিরে আসেন।

সেখানে অপেক্ষমাণ তার অপর ২ স্বজন ও ফায়ারসার্ভিস কর্মীরা আইসিইউর নার্সদের কাছে অনুরোধ করছিলেন যেন ফায়ারফাইটার ছেলেকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ দেওয়া হয় আজগর আলীকে।

বার্ন ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৪ জনকে রোববার সন্ধ্যায় সেখানে আনা হয়। তাদের মধ্যে ২ জন ফায়ার ফাইটার, ১ জন পুলিশ সদস্য।

জানতে চাইলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফায়ারফাইটার গাউসুলের শরীরের ৭০-৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। তিনি বিশেষ পর্যবেক্ষণে আছেন।'

'এ অবস্থায় তার চিকিৎসা যেন কোনোভাবে ব্যাঘাত না হয়, এজন্য আমরা রোগীর কাছে কাউকে যেতে দিচ্ছি না,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman on interim government

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

8h ago