ডিপো পরিচালনায় ‘বিরাট অবহেলা’ দেখছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ডিপো যারা পরিচালনা করেন তাদের বিরাট অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
khalid_mahmud.jpg
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ডিপো যারা পরিচালনা করেন তাদের বিরাট অবহেলা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আজ রোববার দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বন্দরের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে প্রতিবেদন আমাদের দিতে। সেই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে এনবিআর ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা যায় কি না আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করবো।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই তদন্ত কমিটিতে এনবিআরের অন্তর্ভুক্তিটা বেশি জরুরি। কী ধরনের পণ্য এখানে আসা-যাওয়া করে, আমরা কিন্তু শুধু হ্যান্ডেলিং করি। এখানে ডিক্লিয়ারেশনটা কাস্টমসের কাছে দিতে হয়—আমি এ ধরনের পণ্য নিয়ে আসছি বা পাঠাচ্ছি। এটা আমরা পরে জানতে পারি, বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এখানে ডেঞ্জারাস যে গুডস, এটা তারা ডিক্লিয়ার করেছে কি না। যদি করে থাকে তাহলে আলাদা মেজার নেওয়ার বিষয় আছে এবং এ ধরনের প্রাইভেট যে কনটেইনার ডিপোগুলো আছে সেখানে যে প্রস্তুতিগুলো থাকা দরকার, যে জনবল থাকা দরকার সেগুলো আছে কি না। থাকলে সেগুলো কাজ করল না কেন? নিশ্চিতভাবেই এগুলো থাকার কথা, তা না হলে তারা অনুমোদনই পাবে না। তাহলে কেন তারা কাজ করল না, এতগুলো হতাহতের ঘটনা ঘটে গেল। এগুলো আমাদের তদন্তের বেরিয়ে আসবে।

এই মুহূর্তে পুরোপুরিভাবে বলা সম্ভব নয় আসলে এখানে কী ঘটনা ঘটেছে, দায়টা কার। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে বলা যাবে এবং তখন আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব, বলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।

মন্ত্রণালয় কি অবগত থাকে বন্দরে যেসব পণ্য আসছে তার মধ্যে ডেঞ্জারাস কোনো পণ্য আসছে কি না এবং পণ্য স্ক্যান করা হয় কি না জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এর আগে তো কোনো স্ক্যানারই ছিল না। সাধারণত ঘোষণাপত্রের মধ্যে দিয়ে এগুলো আনা-নেওয়া হতো। ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে আমাদের হ্যান্ডেলিং করতে হতো। এখন স্ক্যানার বসানো হয়েছে, আরও স্ক্যানার বসানো প্রক্রিয়াধীন। এখন কিছুটা হলেও স্ক্যানিং হচ্ছে। আমরা এগুলো নিয়ে খুবই তৎপর আছি। বৈরুতের যে ঘটনাটা ঘটেছে, এরপর আমরা বেশ কিছু ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। বন্দর এলাকায় বিপজ্জনক কোনো পণ্য আছে কি না সেগুলো একটি তালিকা আমরা তৈরি করেছি। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, বন্দর এলাকায় কোনো বিপজ্জনক পণ্য নেই।

এখানে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো যেটা, এখানে কী ধরনের মালামাল থাকবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এটা দেখভাল করে না। এটা দেখভাল করে কাস্টমস—কী আসছে, কী যাচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ, কাস্টমস আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। এখানে মনিটরিং কমিটি আছে। সেই ১১ সদস্যের মনিটরিং কমিটিতে কাস্টমস আছে, ব্যবসায়িক, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি আছে যারা মনিটরিং করে। এ ধরনের বেসরকারি কনটেইনার ডিপো পরিচালনায় নিয়ম-নীতিগুলো তারা ঠিক মতো মেনে চলছে কি না সেটা তারা মনিটরিং করে। সেই মনিটরিং সঠিকভাবে হয়েছে কি না সেটাও তদন্তে বেরিয়ে আসবে, বলেন তিনি।

আগুন লাগার প্রায় ১ ঘণ্টা পরে বিস্ফোরণ হয়েছিল। ততক্ষণে কি বোঝা গিয়েছিল কোন কনটেইনারে আগুন লেগেছে, সেটা কারা এনেছিল, তাতে কী ছিল জানতে চাইলে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন তো মানুষকে রক্ষা করার সংগ্রামই চলছে। কনটেইনার বিস্ফোরণের পরে লোহা আঘাত করেছে। আঘাত লেগে পড়ে গেছে, দাহ হয়ে গেছে। উঠে যেতে পারেনি। এই মুহূর্তে বিষয়গুলো জানা এবং উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। ১ শিফটে ২০০ থেকে ২৫০ জন কাজ করে। আমি যেটা শুনেছি, প্রায় ২ শিফটের মানুষ একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০ মানুষ। এত মানুষের মধ্যে আগুন ধরার পরে যদি বিস্ফোরণ হয়ে যায়, কী ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পরে অগ্নি নির্বাপকের দায়িত্বে যারা ছিল তাদের ভূমিকা কী ছিল সেটাও একটা তদন্তের বিষয়।

অনেক সময় দেখা যায়, যারা পণ্য নিয়ে আসে ডিক্লিয়ার দেয় একটা, নিয়ে আসে আরেকটা। সে ধরনের ঘটনাও যদি সেখানে ঘটে, সঠিক তথ্য পেতে হলে এনবিআরকে এখানে যুক্ত করতে হবে। সব থেকে বড় কথা এ ধরনের পদার্থ তারা বৈধ নাকি অবৈধভাবে মজুত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল? যদি বৈধভাবে করে থাকে তাহলে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করতে হবে। কেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলো সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যদি নাশকতা হয় এক ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি অবহেলা হয় তাহলে নীতিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন খালিদ।

Comments