দুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ড
নারায়ণগঞ্জে নৌকাডুবি

সেদিন ২৫-৩০ জনের জীবন বাঁচিয়েছেন মাঝি আবু তালেব

‘চার দিকে ঘন কুয়াশা। কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার শুনতেছি। আমি তখন নৌকা নিয়ে নদীর মধ্যে। কোথা থেকে চিৎকারের শব্দ আসছে বুঝতে পারতেছি না। তীরে না গিয়ে শব্দ ধরে একটু এগুতেই দেখি নদীতে শুধু মাথা আর মাথা, সবাই হাত নাড়াচ্ছে। বাঁচানোর জন্য ডাকতেছে। দ্রুত তাদের কাছে নৌকা নিয়ে যাই। ২৫ থেকে ৩০ জনকে নৌকায় টেনে তুলি…’
ছবি: স্টার/সনদ সাহা

'চার দিকে ঘন কুয়াশা। কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার শুনতেছি। আমি তখন নৌকা নিয়ে নদীর মধ্যে। কোথা থেকে চিৎকারের শব্দ আসছে বুঝতে পারতেছি না। তীরে না গিয়ে শব্দ ধরে একটু এগুতেই দেখি নদীতে শুধু মাথা আর মাথা, সবাই হাত নাড়াচ্ছে। বাঁচানোর জন্য ডাকতেছে। দ্রুত তাদের কাছে নৌকা নিয়ে যাই। ২৫ থেকে ৩০ জনকে নৌকায় টেনে তুলি…'

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী খেয়াঘাটে ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাঝি আবু তালেব দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলেন।

গত বুধবার সকাল পৌনে ৯টায় বক্তাবলী খেয়াঘাট থেকে ধর্মগঞ্জ খেয়াঘাট যাওয়ার পথে বুড়িগঙ্গা নদী পারের সময় 'এমভি ফারহান -৬' লঞ্চের ধাক্কায় অন্তত ৫০ জন যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা ডুবে যায়। সেসময় চিৎকার শুনে নৌকায় করে অনেককে নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন

ওই সময় ২৫ থেকে ৩০ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন মাঝি আবু তালেব।

কথা বলতে বলতে নিজের হাতের আঙ্গুল নদীর দিকে তাঁক করে তিনি বলেন, 'স্যার ওই যে কচুরিপানা ভাসতেছে দেখেন, সেখান থাকে সবাইকে নৌকায় উঠায়ছি। ওইখানেই নৌকটা ডুবছে।'

'নদীতে জোয়ার ছিল তাই লঞ্চের ধাক্কায় নৌকটাকে উত্তর দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে। আমি সেই জায়গাটা উদ্ধারকারীদের দেখিয়েছি। কিন্তু সেখানেও পাচ্ছে না।'

সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, '১০ বছরের বেশি হবে এ ঘাটে খেয়া পারাপারের কাজ করি। কিন্তু কখনো এমন দৃশ্য দেখি নাই। মানুষ জীবন বাঁচাতে যা করছে! যারা নদীতে ছিল সবাইকে তুলছি নৌকায়। কিন্তু তারপরও নিখোঁজ আছে আরও কয়জন। সবাইকে তুলতে পারলে ভালো লাগতো। এই যে মানুষ কান্না করছে দেখে কষ্ট হয়। আমাদের নৌকার মাঝিকেও খোঁজে পাচ্ছি না। নিখোঁজ আছে নাকি বলতে পারছি না। আমি তারে নৌকায় তুলি নাই।'

'কুয়াশার জন্যই এমন হয়েছে। আমি যখন ঘাট থেকে দুজন যাত্রী নিয়ে বক্তাবলী ঘাটে যাচ্ছি তখনও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। যাত্রীদের ঠেলাঠেলিতে নৌকা ছাড়ছি। নৌকা ছেড়ে ভালো হয়েছে। মানুষগুলেকে বাঁচাতে পারছি। না হলে আরও মানুষ নিখোঁজ থাকতো। নৌকায় যখন তুলছি সবাই ভয়ে কান্না করছিল। তাদের সান্ত্বনা দিয়ে পারে নিয়ে নামায়ে দিছি,' বলেন তিনি।

Comments