নারায়ণগঞ্জের পথে পথে কোরবানির মাংস বিক্রি

বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় কোরবানির মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

‘আমাদের মতো গরীব মানুষের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নাই। কিন্তু, পোলা মাইয়া তো গরুর মাংস খাইতে চায়। তাই এখান থেকে এক কেজি মাংস কিনছি। বাসায় গিয়ে রান্না করে রাইতে এক সঙ্গে খামু।’ কথাগুলো দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন রিকশা চালক হাসু মিয়া। আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং রেল গেইট এলাকা থেকে কোরবানির মাংস কেনেন তিনি।

সরেজিমেন নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, চাষাঢ়া গোল চত্ত্বর, উকিলপাড়ার মোড়, মণ্ডলপাড়া মোড়, সেন্ট্রাল খেয়াঘাট, মেট্রোহল মোড়, কালীরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ব্যাগে ও রিকশা-ভ্যানে করে কোরবানির গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।

যাদের কোরবানি দেওয়ার বা বেশি দাম দিয়ে মাংস কেনার সামর্থ্য নেই এবং কারো বাড়ি থেকে মাংস চেয়ে নিতে সংকোচ বোধ করেন, এমন লোকজনই কম দামে মাংস কেনার জন্য এসব সব জায়গায় মাংস কিনতে ভিড় করছেন।

নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় কোরবানির মাংস বেচাকেনা জমে ওঠে। ছবি: সনদ সাহা/স্টার

এ সময় দেখা যায়, হাসু মিয়ার মতো অনেক রিকশা চালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এসব কোরবানির মাংস কিনছেন। কেউ আধা কেজি, কেউ দুই থেকে তিন কেজিও কিনছেন। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর গরুর ভুঁড়ি, হাড় ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কেজি করে। আর এগুলো যারা বিক্রি করছেন তাদের অধিকাংশই কসাই কিংবা ভিক্ষুক।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করা দানের মাংস বিক্রি করছেন কাসেম মোল্লা। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘সংসারে আমি আর আমার স্ত্রী। ছেলে মেয়ে কেউ নেই। এত মাংস কি করুম। তাই বিক্রি করে দিচ্ছি। বিক্রির টাকা দিয়ে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিনে নিয়ে যাবে।’

ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগমও বিভিন্ন বাড়ি থেকে মাংস সংগ্রহ করে এখন বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শুধু মাংস কি আর খাইতে পারমু। এর লগে মশলা পাতিও লাগবো। টাকা পামু কই। তাই বেইচ্চা দিতেছি।’

কোরবানির মাংস বিক্রি করতে আসা কসাই ইমরান হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনটি বাড়িতে পাঁচটি গরুর কোরবানির মাংস কেটে দিয়েছি। সেখান থেকে ১০ কেজি মাংস পেয়েছি। বাসায় ফ্রিজ নাই যে রেখে দিব। তাই পাঁচ কেজি বিক্রি করে দিচ্ছি।’

কোরবানির মাংস কিনতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মানুষের বাসায় কাজ করি। করোনার জন্য কাজ থেকে না করে দিছে। তারপর থেকেই কষ্ট করে সংসার চলে। আত্মীয় স্বজন এমন কেউ নেই যে কোরবানির মাংস দেবে। তাই এখান থেকে ৪৫০ টাকা করে তিন কেজি মাংস কিনছি। অর্ধেকটি নিজে রাখমু আর অর্ধেকটি মেয়ের বাড়িতে দিমু।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী কোরবানি দিতে না পেরে, এসেছিলেন কোরবানির মাংস কিনতে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার জুতার দোকান। লকডাউনে বেচাকেনা ছিল না। মাল বিক্রি হয়নি, তাই ঋণের টাকাই পরিশোধ করতে পারিনি। তাই কোরবানিও দিতে পারিনি। তাই এখান থেকে মাংস কিনেছি।’

তিনি বলেন, ‘সকালে কোরবানি হয়েছে, এখন বিকেল হয়ে গেছে। তাই মাংস একটু উনিশ বিশ থাকবেই। তাছাড়া দামও কম আছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

2h ago