নিরাপত্তা না থাকলেও সড়কে ঝুঁকির নিশ্চয়তা আছে

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুতি পূরণ না করায় দুর্ঘটনার পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে মনে করছেন যাত্রী কল্যাণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা ব্যক্তিরা।
নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবিটি গতকাল বৃহস্পতিবার তোলা হয়েছে। ছবি: প্রবীর দাশ

নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য সরকারি সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুতি পূরণ না করায় দুর্ঘটনার পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে মনে করছেন যাত্রী কল্যাণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা ব্যক্তিরা।

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত বেশিরভাগ দাবি এখনো পূরণ করা হয়নি।

এ অবস্থায় গত বুধবার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থ ীনাঈম হাসানের নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।

যাত্রী কল্যাণে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, ২০১৮ সালের আন্দোলনের পরে তৈরি অনেক উদ্যোগ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তার ভাষ্য, সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করা হলেও আইনের অনেক ধারা প্রয়োগ করা হয়নি।

গতকাল রাতে মোজাম্মেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এর ফলে পরিবহন খাতে নৈরাজ্য বিরাজ করছে এবং সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে।'

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ২ শিক্ষার্থী নিহত হন। এর বিচারের পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন তাদের সহপাঠীরা। এরপর, অন্যান্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দিলে সেই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের সময় এবং পরে, আইন প্রণেতারা দ্রুত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি ১৭ দফার নির্দেশনা জারি করে। পুলিশ রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে একাধিকবার 'ট্রাফিক সপ্তাহ' পালন করে। এ সময় পরিবহন নেতারাও পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে কোনো উদ্যোগেই তেমন কার্যকর হয়নি এবং সড়কে চিত্র প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। তাছাড়া গত ৩ বছরে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা তীব্রভাবে বেড়েছে।

পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২ হাজার ৬৩৫ জন নিহত এবং ১ হাজার ৯২০ জন আহত হন।

তবে চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ৩ হাজার ৭০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৫০২ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৪৭৯ জন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ১৪৭টি দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৪ হাজার ১৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছর ৪ হাজার ১৯৮টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৯১৮ জন নিহত হয়েছেন।

তবে নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা এই সংখ্যা আরও বেশি বলে উল্লেখ করেছে।

দাবি পূরণ হয়নি

২০১৮ সালের আন্দোলনের ৯টি দাবির মধ্যে একটি ছিল বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা এবং এই জাতীয় বিধান সড়ক পরিবহন আইনে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা।

একই বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদে সড়ক পরিবহন আইন পাস করে করা হয়। সেখানে বেপরোয়া ও অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এবং কেউ নিহত বা গুরুতর আহত হলে ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়।

প্রয়োজনীয় বিধিমালার অনুপস্থিতি এবং পরিবহন সংগঠনগুলোর বিরোধিতার কারণে সেই আইনের অনেক ধারা এখনও কার্যকর করা হয়নি।

আন্দোলনে আরেকটি দাবি ছিল, বনানীর যেখানে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেই রমিজ উদ্দিন কলেজের কাছে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ । সরকার সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণ করেছে, তবে এটি এখনো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।

ওই আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা অর্ধেক ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করার দাবিও জানান। সম্প্রতি বাস ভাড়া বাড়ানোর পর একই দাবিতে তারা আবারও বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

তাদের অন্য দাবি ছিল ফিটনেস ছাড়পত্র ছাড়া বাস ও বৈধ লাইসেন্স ছাড়া চালকদের রাস্তায় না নামানো।

কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ২০১৯ সালের জুলাইয়ে হাইকোর্টকে জানায় যে, ৪ লাখ ৭৯ হাজার গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই চলছে। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কয়েক লাখ চালক আছেন।

ওই বছরের ডিসেম্বরে রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জাবালে নূর পরিবহনের ২ বাসের চালক ও এক হেলপারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

তবে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকায় বিচার পেতে ভুক্তভোগী পরিবারকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে ।

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments

The Daily Star  | English
Gazipur factory fire September 2024

Business community's voice needed in the interim government

It is necessary for keeping the wheels of growth running and attracting foreign investment in the new Bangladesh.

11h ago