পদ্মা সেতু: দেশীয় নির্মাণসামগ্রীর অবদান

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের আস্থাকে উজ্জীবিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই সেতু দেশে-বিদেশে স্থানীয় নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষার একটি সুযোগ করে দিয়েছে। এটি প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশও মানসম্পন্ন সামগ্রী তৈরি করতে পারে।
রাতের বেলা আলোক সজ্জিত পদ্মা সেতু। ছবি: সাজ্জাদ হোসাইন

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের আস্থাকে উজ্জীবিত করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই সেতু দেশে-বিদেশে স্থানীয় নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষার একটি সুযোগ করে দিয়েছে। এটি প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশও মানসম্পন্ন সামগ্রী তৈরি করতে পারে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি মূল উপাদান বাংলাদেশে তৈরি এবং স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসব নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করেছে।

প্রকল্পের মূল কাঠামো নির্মাণে প্রায় ৯২ হাজার টন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ ইস্পাত সরবরাহ করেছে। 

বিএসআরএমই শুধু ৮৮ হাজার টন ইস্পাত সরবরাহ করেছে, যা মোট ইস্পাতের ৯৬ শতাংশ।

সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সেতু নির্মাণে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর অনেক অবদান আছে এবং তারাও বড় ধরনের উৎসাহ পেয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এই প্রকল্পে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান এসেছে স্থানীয় উৎস থেকে।'

নদী শাসনে রড, সিমেন্ট, বালু ও পাথর সরবরাহ, সেতুর দু'পাশে অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ এবং মেগা প্রকল্প সংক্রান্ত অন্যান্য কাঠামোয় স্থানীয় শিল্পগুলোর অবদান বেশি।

বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রডের ৯৫ শতাংশের বেশি বিএসআরএম সরবরাহ করেছে।

তিনি বলেন, 'পণ্য ও পরিষেবাগুলোর গুণগতমান এবং পণ্য সরবরাহের সক্ষমতায় দক্ষতার কারণে আমাদের বেছে নেওয়া হয়েছিল।'

তপন সেনগুপ্তের মতে, বিএসআরএম পণ্য সম্পর্কে সেতুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোনো করেনি।

পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোতে প্রায় আড়াই লাখ টন সিমেন্ট ব্যবহার করা হয় এবং সবগুলোই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এসেছে।

এর মধ্যে স্ক্যান সিমেন্ট একাই প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার টন সিমেন্ট সরবরাহ করেছে।

বসুন্ধরা সিমেন্ট, ক্রাউন সিমেন্ট, আবুল খায়ের গ্রুপের শাহ সিমেন্ট এবং সেভেন সার্কেল গ্রুপের সেভেন রিংস সিমেন্টও সেতুর বিভিন্ন নির্মাণের কাজে সিমেন্ট সরবরাহ করেছে।

হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশে স্ক্যান সিমেন্ট বাজারজাত করে। 
প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশের বিক্রয় পরিচালক সাঈফ নাসির বলেন, 'বাংলাদেশে উৎপাদিত আমাদের সিমেন্ট মূল কাঠামোর কলামগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের গুণগতমান সিমেন্টের সরবরাহকারী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য মূল প্যারামিটার ছিল।'

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড চলমান পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পাশাপাশি সেতু প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহ করেছে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, 'পদ্মা সেতু একটি মাইলফলক প্রকল্প। এর অংশ হতে পেরে আমরা গর্বিত।'

শুধু ইস্পাত ও সিমেন্টই নয়, আলোকসজ্জার জন্য এবং পদ্মা সেতুর দু'পাশে বিভিন্ন স্থাপনা ও সাব-স্টেশনের জন্যও দেশে তৈরি ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় ক্যাবল প্রস্তুতকারী সংস্থা বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই প্রকল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল সরবরাহ করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় পরিচালক রফিকুল ইসলাম রনি বলেন, 'আমরা গত ৩ বছর ধরে ক্যাবল সরবরাহ করে আসছি। সরবরাহকৃত ক্যাবলের মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা হতে পারে।'

রফিকুল ইসলাম রনি বলেন, 'এতো বড় একটি প্রকল্পে অংশ নিতে পেরে আমরা সত্যিই গর্বিত। আমাদের ক্যাবলের মাধ্যমে পদ্ম সেতু আলোকিত হচ্ছে এটি দেখলে অনেক ভালো লাগে।'

পদ্ম সেতুতে স্থানীয়ভাবে তৈরি পাইপও ব্যবহার করা হয়েছে।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পল জানান, আরএফএল গ্রুপ উচ্চ ঘনত্বের পলিইথিলিন এবং পিভিসি ক্যাবল ডাক্টিং পাইপ এবং জিঙ্ক আবৃত ডব্লিউ-বিম গার্ডরেল সরবরাহ করেছে।

অনুবাদ করেছেন সুমন আলী

Comments