পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে আবারও ভাঙন

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়. ছবি: পলাশ খান/স্টার
পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়. ছবি: পলাশ খান/স্টার

পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা জিরো পয়েন্টের মাঝি কান্দি এলাকার ওই বাঁধের পাশের তিনটি বসতঘর ও দুটি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার নতুন করে এই ভাঙন দেখা দেয়। সকালে ২০০ মিটারের মতো অংশ ধসে নদীতে পড়ে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর আশেপাশে বালুচর গড়ে ওঠা এবং বাঁধের কাছাকাছি জায়গায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

বর্ষায় পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতাও আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে পাউবো।

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়. ছবি: পলাশ খান/স্টার
পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়. ছবি: পলাশ খান/স্টার

এর আগে গত বছরের নভেম্বরে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়।

তবে শরীয়তপুর পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের কাজ শুরু করেনি।

এর চার মাস পর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে প্রায় দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩ হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামত কাজ শুরু করে সংস্থাটি।

ওই সময় বাঁধ মেরামত প্রকল্প পরিদর্শন করতে এলে শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ভাঙনের বিষয়টি জানার পরও কেন তা মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু হয়নি।

তবে তিনি বা সংশ্লিষ্ট কেউ বিষয়টি নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ছাড়া, ভাঙনের আশেপাশের অন্যান্য স্থানও ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে পাউবো। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প অনুমোদন পেলে চলমান বর্ষা মৌসুম শেষে শুষ্ক মৌসুমে মূল বাঁধ রক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারেক হাসান বলেন, প্রায় ১২-১৩ বছর আগে সেতু বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। গত নভেম্বরে ভাঙনের পর পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালায়। তাতে দেখা গেছে, প্রায় এক কিলোমিটার অংশে বাঁধের কাছে নদীর গভীরতা বেড়েছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি এক কিলোমিটার অংশেও নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং মাটির ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, শনিবার উজান এবং ভাটি মিলিয়ে আনুমানিক ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। এই মুহূর্তে শ্রমিকরা ঈদের ছুটি উপভোগ করছে। রোববার সকালে গিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁধটি রক্ষার জন্য দুয়েক দিনের মধ্যেই পাউবো কাজ শুরু করবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়. ছবি: পলাশ খান/স্টার
পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন। শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায়. ছবি: পলাশ খান/স্টার

'বাঁধ মজবুতকরণের জন্য একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁধটি মজবুত করা না হলে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি ও সাত্তার মাদবর বাজারসহ চার গ্রামের কয়েক শ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এদিকে নদীভাঙনের কারণে বাঁধের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সব মিলিয়ে কয়েক শ বসতবাড়ি এখন ভাঙনের হুমকিতে।

Comments

The Daily Star  | English

G7 expresses support for Israel, calls Iran source of instability

Israel and Iran attacked each other for a fifth straight day on Tuesday

2h ago