পুরোনোই তাদের কাছে নতুন!

ঈদ মানেই নতুন পোশাক। ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাকে ছেয়ে যায় মার্কেট-শপিং মল। তবে অনেকেই আছেন যাদের ঈদে নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য হয় না। ফুটপাতের পুরোনো কাপড়ের দোকান থেকে কেনা পোশাক পরেই তারা ঈদ উদযাপন করেন।
ঈদকে উপলক্ষে পুরোনো কাপড়ের দোকান থেকে পাঞ্জাবি কিনছেন স্বল্প আয়ের ক্রেতা। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ঈদ মানেই নতুন পোশাক। ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাকে ছেয়ে যায় মার্কেট-শপিং মল। তবে অনেকেই আছেন যাদের ঈদে নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য হয় না। ফুটপাতের পুরোনো কাপড়ের দোকান থেকে কেনা পোশাক পরেই তারা ঈদ উদযাপন করেন।

রাজধানীর কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, মিরপুর-১ এ আছে এরকম অসংখ্য পুরোনো কাপড়ের খুচরো দোকান। তবে পুরোনো কাপড়ের পাইকারি দোকান বেগমবাজার ও সদরঘাটে।

সম্প্রতি সরেজমিনে এসব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে পুরোনো কাপড়ের দোকান বসেছে। দোকানে শার্ট, গেঞ্জি, জিন্সের প্যান্ট, ফতুয়া, জুতা, স্যান্ডেলসহ বাচ্চাদের পোশাক সাজিয়ে রাখা, দেখতে একদম নতুনের মতো। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতারাও ভিড় করছেন সেখানে।

কারওয়ান বাজার এলাকায় মসজিদের সামনে একটি পুরোনো কাপড়ের দোকান থেকে ১০০ টাকা দিয়ে সাদা রঙের একটি পাঞ্জাবি কিনলেন শাহীনবাগ এলাকার বাসিন্দা মুরগী বিক্রেতা জামিল হোসেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মার্কেটে কাপড়ের অনেক দাম। ঈদ উপলক্ষে তাই এখান থেকে একটা পাঞ্জাবি কিনলাম। স্ত্রীর জন্য ১৫০ টাকা দিয়ে কাপড় কিনে দেবো।'

দিনের চেয়ে রাতেই এসব দোকানে বেচাকেনা ভালো হয়। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

'গত দুই বছর ঈদে কিছু কেনা হয়নি। এবার একমাত্র এই পাঞ্জাবিটাই নিলাম,' বলেন তিনি।

দেখতে একদম নতুন পাঞ্জাবিটি ব্যবসায়ী নাজমুল হক এনেছেন বেগমবাজারের পাইকারি দোকান থেকে।

৪ বছর ধরে পুরোনো কাপড় বিক্রি করা নাজমুল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বেগমবাজার থেকে ৩০-৩৫ টাকা করে প্রতিটি কাপড় এনেছেন। সেগুলোকে ধুয়ে, সেলাই, রঙ ও ইস্ত্রি করার পর সবমিলিয়ে প্রতিটি কাপড়ের পেছনে ৫০-৬০ টাকা খরচ করেছেন।

এসব কাপড় তিনি ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান।

ইস্টার্ন প্লাজার দোকান কর্মচারী মো. রুবেলও এসেছেন পুরোনো কাপড় কিনতে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি জিন্সের প্যান্ট কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। দেখতে একদম নতুন প্যান্ট। এখন শার্ট খুঁজছি।'

কারওয়ানবাজার ও ফার্মগেটে এমন প্রায় ২০-৩০টি পুরোনো কাপড়ের দোকান আছে। আছে পুরোনো জুতা-স্যান্ডেলের দোকানও। রাস্তায় বা ফুটপাতে জুতা-স্যান্ডেলগুলো সাজিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে পছন্দের জুতা বা স্যান্ডেল কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

রাস্তায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুরোনো জুতা-স্যান্ডেল। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ফার্মগেট এলাকায় ঈদের জন্য স্যান্ডেল কিনতে এসেছেন মিরপুর এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক জোড়া স্যান্ডেল কিনেছি ৩০০ টাকা দিয়ে। দোকান থেকে কিনতে গেলে এটি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দাম পড়ত।'

মিরপুর-১ নম্বর শাহ আলী শপিং কমপ্লেক্সের সামনের ফুটপাত থেকে ছেলেকে নিয়ে পুরোনো কাপড় কিনতে এসেছেন আনসার ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা সেনোয়ারা বেগম (৪০)।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্বামীর জন্য একটি লুঙ্গি কিনেছেন। ছেলের জন্য একটি জিন্সের প্যান্ট, শার্ট ও স্যান্ডেল কিনবেন। প্রতিটির জন্য তার বাজেট ২০০ টাকা।

এ ফুটপাতে ৪ বছর ধরে ব্যবসা করছেন মেহেদী হাসান। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি পুরোনো পোশাক বিক্রি করি। মার্কেট বা শপিং মলে বিক্রি হয় না, অনেক বছর ধরে পড়ে আছে, রঙ জ্বলে গেছে, ছিঁড়ে গেছে আমি এসব মাল লটে কিনে এনে বিক্রি করি।'

'আমার কাছে জিন্সের প্যান্ট, শার্ট, শিশুদের পোশাকসহ সব ধরনের কাপড় আছে। দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর বিক্রি ভালো হয়,' বলেন তিনি।

ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানান, বাসাবাড়ি থেকে সিলভারের হাড়ি-পাতিলের বিনিময়ে হকাররা এসব পুরোনো কাপড় সংগ্রহ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া মার্কেট বা শপিং মলে অবিক্রীত পুরোনো কাপড়ও সংগ্রহ করে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

বেগমবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শুধু পুরোনো কাপড়ই নয়, আছে পুরোনো বেল্ট, ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেল। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা খুচরা বিক্রেতারা এখান থেকে সেগুলো বিক্রির জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

44m ago